প্রেমহীন জীবনের কারণ

দেখতে দেখতে জীবনের ২৪টি বসন্ত পার হয়ে গেছে। স্কুল-কলেজের গন্ডি পার হয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও মনের মতো কোনো সঙ্গীর দেখা মেলেনি। আপনার আশেপাশের সকল বন্ধুরা যখন প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার হাত ধরে আপনার সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়ায় তখন আপনার মনের মধ্যে কালবৈশাখীর ঝড় ঘুরপাক খায়। এই একাকীত্ব জীবন সারাটিক্ষণ আপনাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। ওদের আছে আমার নেই কেনো। সারাক্ষণ আপনার মধ্যে এই বিষয়টিই ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু আপনার এই একাকীত্ব জীবনের জন্য দায়ী অন্য কেউ নয়, আপনি নিজেই এর জন্য শতভাগ দায়ী। আসুন এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণ ও নিজেকে বের করে আনার কিছু বিষয় সম্পর্কে জেনে নিই।    

 

 

সঠিক সময়ে  সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়া
আপনাকে ভালোবেসে মনের দরজায় অনেকেই হয়তো কড়ায় নেড়েছিলো। কিন্তু আপনি তখন দেননি। তাই সাড়া না পেয়ে সে নিঃশব্দে সরে গিয়েছে। অথচ আপনি হয়তো পুরো ব্যাপারটা না বুঝেই  কোনো প্রতিক্রিয়া  দেখান নি। অথবা ইচ্ছে করেই সে সময় বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। যারা  বিভিন্ন কারণে অথবা না বুঝে  অন্যের অনুভবের আহবানে সাড়া  দেয় না, তারা সাধারণত একাই রয়ে যায়। তবে তাই বলে  তো  যেকেউ  প্রেমের প্রস্তাব দিলেই  রাজী হওয়া যায় না। আপনার পছন্দ অনুযায়ী এবং আপনার পরিবারের চাহিদার সাথে যদি কারো  যোগ্যতা মিলে যায় তাহলেই  কেবল মাত্র সাড়া দিন। মনের মিল থাকলে  প্রেম হয়েও  যেতে পারে।

 

নিজেকে গুটিয়ে রাখা
আপনি যদি বিপরীত লিঙ্গের মানুষদের  থেকে অনেক  বেশি দূরত্ব বজায়  রেখে চলবেন না অথাৎ অতিরিক্ত লজ্জা না পেয়ে তাদের সাথে সহজবাবে মিমার চেষ্টা করুন। তানাহলে আপনার  প্রেমে পরার সম্ভাবনা ধুলায় মিশিয়ে দিন । প্রেম যদি করতেই চান তাহলে জড়তা কাটিয়ে বিপরীত লিঙ্গের সাথে সখ্যতা করার মতো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে নিজের ভেতরে।  কেউ যদি আপনার সাথে কথা বলতে আসে কিংবা সিনেমা দেখতে যেতে চায় আর আপনি যদি লজ্জা পেয়ে পুরো ব্যাপারটি এড়িয়ে যান, তাহলে নিশ্চিত ভাবেই সম্পর্ক গড়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। প্রেম করতে চাইলে বিপরীত লিঙ্গের সাথে বন্ধুত্বে আগ্রহ দেখাতেই হবে আপনাকেই । কেউ নিজ  থেকে কথা বলতে চাইলে, বন্ধুত্ব করতে চাইলে সেটা গ্রহণ করুন। লজ্জা পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখলে দিনশেষে কেবল

নিঃসঙ্গতাই আসবে আপনার ঝুলিতে।

 

যাপিত জীবনের ব্যস্ততা
জীবনে পড়াশোনা আর ক্যারীয়ার গড়ার  ফাঁকে সময়ই হয়তো মেলেনি  প্রেম নিয়ে ভাবার। যখন পড়াশোনার জীবন শেষ তখন তো চাকরী জীবনের শুরু। কর্ম ক্ষেত্রে সারাদিন ব্যয় করার পর প্রেম করার সুযোগ কিংবা ফুসরত কোনোটাই তো মেলে না অনেকের। জীবনের প্রতি এমন অভিযোগ অনেকেরই। ব্যস্ততা তো থাকবেই। কিন্তু ব্যস্ততার সাথে তাল মিলিয়ে মনের চাহিদাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখবেন কেবল মাত্র যন্ত্রের মত কাজ করে যাওয়ার নাম জীবন নয়। জীবনে আবেগ, অনূভূতি ও ভালোবাসারও প্রয়োজন আছে। তাই ব্যস্ততার মধ্যেই নিজের জন্য, নিজের বন্ধুদের জন্য সময় বের করা উচিত।  বেড়াতে যাওয়া, সামজিকতা, দশ জনের সাথে মেলামেশা ইত্যাদি করলেই না একটা সুযোগ তৈরি হবে মনের মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার।

 

 

সম্পর্ক নিয়ে ভয়
প্রেম করা নিয়ে অনেকেরই মনে ভয় থাকে। প্রায় সব মানুষের মধ্যেই প্রেম-ভালোবাসা সম্পর্কে কিছু নেতিবাচক ধারণা থাকে।  কেউ  কেউ মনে করেন প্রেম করা মানেই অনেক খরচ, মানসিক অশান্তি, উটকো ঝামেলা ইত্যাদি। তাই প্রেমের েেত্র এক পা এগিয়ে দুই পা পিছিয়ে যান অনেকেই। একটা বিষয় মনে রাখা উচিত, যদি সম্পর্ক গড়তেই চান তাহলে ভয় পেয়ে লাভ  নেই। মনের মধ্যে একই সঙ্গে ভয় এবং ইচ্ছা দুটি থাকলে আপনি বার বার দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যাবেন এবং হতাশা কাজ করবে আপনার মধ্যে। আর প্রেম করলে কিছুটা বেশি খরচ হবেই। ঘুরাঘুরি, খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি খরচ গুলো দুজনে মিলেমিশে বহন করবেন। আর সম্পর্কে ছোটখাটো মানসিক টানা পোড়েন থাকবেই। এগুলো এড়িয়ে যেতে পারলে কিংবা মেনে নিতে পারলে সম্পর্ক সুন্দর হয়। তাই প্রেম করার ইচ্ছা থাকলে মন থেকে অহেতুক ভয় দূর করে  ফেলুন। কারণ, কষ্ট দেওয়ার… নাম ভালোবাসা না, কষ্ট সহ্য করার নাম ভালোবাসা ।

 

জীবন একটাই। আর সেই একটা মাত্র জীবন মনের মানুষ ছাড়া একলা কাটিয়ে দেয়ার কোনো মানে নেই। বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সাথে কথা বলতে অতিরিক্ত জড়তা, সংকোচ ইত্যাদি  ঝেড়ে  ফেলুন। কেউ আগ্রহ নিয়ে বন্ধুত্ব করতে চাইলে তার আহবানে সারা দিন, এই বিশ্বাস রাখবেন যে নিশ্চয়ই আপনার ভালো  কোনো দিক তাকে আগ্রহী করে তুলেছে আপনার প্রতি। নিজের ব্যক্তিগত জীবন ও সামাজিকতা রক্ষার জন্য ব্যস্ত জীবনের ফাঁকেও একটু সময় বের করুন । নিজেকে অকারণে গুটিয়ে না রেখে সকলের সাথে মেশার চেষ্টা করুন । জীবটাকে নতুন করে উপভোগ করুন।