ব্রন এক কৈশোরিক বিড়ম্বনা
সত্যিই তাই! কিশোর বয়সে ব্রন হওয়াটা এক অনিবার্য বিড়ম্বনাই বটে।
কিশোর-কিশোরীরা এ সময়টা যেন একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে। লজ্জায় যেন মুখ
লুকাতে ইচ্ছে করে। কিন্তু চাইলেই কি এ বিব্রতকর অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া
যায়? এ যে এই বয়সের অনিবার্য ঘটনা। রুখবে কে আর তারে? কাজেই ভাগ্যের এই
অমোঘ পরিণতিকে সহজেই মেনে নিয়ে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যথাসম্ভব বেঁচে
থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর সেই করণীয় কিছু জানাতেই আজকের এ প্রসঙ্গের
অবতারণা।
কেন এমন হয়?
আগেই বলেছি কিশোর বেলাটা এমনই একটা ক্রান্তিকাল যে সময়টা হচ্ছে শৈশবকালের শেষ আর যৌবনের উঁকি দেয়ার মাঝের বিশেষ এক সময়। আর এই সময়টাতেই কিশোর-কিশোরীদের দেহাভ্যন্তরে চলে বিশেষ বিশেষ কিছু পরিবর্তন। সবচেয়ে বেশি যে ব্যাপারটা ঘটে তা হলো হরমোনের উদ্দীপনা। তারই একটি লক্ষণ হলো এই ব্রন। মূলত এন্ড্রোজেন, প্রজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন নামক যৌন হরমোনের উদ্দীপনার জন্য এটা হয়। এর ফলে ত্বকের নিচে সিবাসিয়াস নামক গ্রন্থি থেকে সেবাম নামক এক প্রকার সাদা জেলির মতো পদার্থ নিঃসৃত হয়।
এই সেবাম ত্বকের নিচে অবস্থান করে বিধায় ব্রনগুলো উঁচু উঁচু ঢিবির মত দেখায়। তবে যার যত বেশি সেবাম নিঃসৃত হবে তার ততোধিক মাত্রায় ব্রন দেখা দেবে। কারণ হরমোনের উদ্দীপনা ব্যক্তিবিশেষে কমবেশি হতে পারে। এ ছাড়া ত্বকের নিচে এক ধরনের ইনফেকশনের কারণেও সিবাসিয়াস গ্রন্থির উত্তেজনার কারণে ব্রন হতে পারে। কিছু রোগের কারণেও ব্রন দেখা দিতে পারে। যেমন মোটা হয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, শরীরে লিপিডের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি। আবার অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণেও হতে পারে। বংশগত কারণেও কারো কারো আবার ব্রন খুব বেশি মাত্রায় হতে পারে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত কসমেটিকস ব্যবহারে লোমকূপগুলো বন্ধ হয়েও ব্রন হতে পারে। আবার কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াজনিত কারণেও ব্রন হতে দেখা যায়। সে রকম ওষুধগুলো হলো- স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, খিচুনিনাশক ওষুধ, ঘুমের ওষুধ ইত্যাদি। এ ছাড়া চকলেট, ক্যান্ডি, চিপস, বাদাম সফট্ ড্রিংকস, তৈলাক্ত খাবার ইত্যাদি গ্রহণের ফলেও ব্রনের আধিক্য দেখা দিতে পারে।
ব্রনের লক্ষণ কী?
মূলত বয়সটা হচ্ছে বিরাট একটা ফ্যাক্টর। এ বয়সে এটা হবেই। আগেই বলেছি, ত্বকের ওপর উইপোকার ঢিবির মতো উঁচু উঁচু দাগগুলোই ব্রন। কারো আকারে ছোট ছোট, কারো বড়, কারোটা আকারে বড় হতে হতে পেকে ফেটে যায়, কারো একই রকম থাকে। শরীরে ব্রন হওয়ার জায়গাগুলো হচ্ছে মুখমণ্ডল, ঘাড়, বুক ও পিঠের ওপরের অংশে। তবে শরীরের যেকোনা জায়গায় হতে পারে। সাধারণত এই বয়সে ব্রন শুরু হয় নাকের ডগার ওপর হানা দেয়ার মাধ্যমে। প্রথমে লালচে বর্ণের এবং ক্রমশ হলদেটে বর্ণের হয়ে থাকে। এরপর কপালে, চিবুকে, গালে, বাহুর ওপরের অংশে হতে দেখা যায়। ব্রনের ফলে কারো সুন্দর মুখটাতে সাদা দাগ পড়ে যেতে পারে আবার কারোবা মুখের ত্বকের ওপর ছোট ছোট গর্ত হয়ে যেতে পারে। তবে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করলে এই পরিণতি ঠেকানো সম্ভব অথবা মাত্রা কমিয়ে আনা যেতে পারে সেটা পরে বলব। ব্রনের আধিক্যের সাথে কারো কারো আবার জ্বর হতে পারে অথবা হাত-পায়ের গিরায় ব্যথা হতে পারে।
তাহলে পরিত্রাণের উপায়?
হ্যাঁ, জানি এটাই এখন বড় জিজ্ঞাস্য ব্যাপার। তবে চিন্তার কিছু নেই, পরিত্রাণের উপায় আছে বৈকি!
ব্রনের চিকিৎসার প্রথম কথা হলো এটা কৈশোরিক বিড়ম্বনা, এই বয়স পেরিয়ে গেলে অর্থাৎ তারুণ্যের জোয়ারে যখন ভাটার টান আসবে অর্থাৎ সাধারণত ২০ বছর বয়সের পর এসব ঝামেলা এমনিতেই বিদায় নেয়। বলাবাহুল্য যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্রন স্বল্পমাত্রায় দেখা যায় এবং তা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে মাত্র শতকরা ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে কমবেশি চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।
ব্রনের চিকিৎসা কয়েকটি উপায়ে করা যায়। ব্যক্তিবিশেষে ও মাত্রানুসারে যার জন্য যেটা প্রযোজ্য তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা যেতে পারে। কিছু অভ্যাস মেনে চলা, মুখে মাখার জন্য ক্রিম, মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ অথবা ক্ষেত্রবিশেষে ব্রনের ওপর ছোট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ব্রনের চিকিৎসা হয়ে থাকে।
ক) অভ্যাসসমূহ : প্রথম ও পূর্বশর্তই হলো সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। বিশেষ করে মুখমণ্ডল ধৌতকরণ প্রণালীটা ভালোভাবে জানতে হবে ও অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মুখের ত্বককে বেশি তৈলাক্ত বা বেশি শুষ্ক হতে দেয়া যাবে না। সে জন্য দিনে অন্তত দুইবার নন-মেডিকেটেড নরম সাবান দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করার সময় হাতের আঙুলের মাথা দিয়ে বৃত্তকারভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সাবান দ্বারা মুখ পরিষ্কার করতে হবে আলতোভাবে। মুখে বেশি ঘষাঘষি করা যাবে না। আবার মুখের ব্রণ যখন তখন নখ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তোলার চেষ্টা না করাই ভালো, তাতে মুখের ওপর দাগ পড়তে পারে। এ সময়ে পারতপক্ষে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো কসমেটিকস ব্যবহার না করাই ভালো। যাদের তৈলাক্ত চুল আছে তাদের চুলটাও পরিষ্কার রাখতে হবে। খুশকিমুক্ত রাখতে হবে। এসময় চুলে তেল, হেয়ার জেল ব্যবহার নিষিদ্ধ। এ ছাড়া বাইরে থেকে বা খেলাধুলা শেষে ঘরে এসে দ্রুত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া উচিত। ঘর্মাক্ত জামাকাপড় তাড়াতাড়ি খুলে শুকাতে দেয়া উচিত। তা ছাড়া প্রচণ্ড রোদের মধ্যে ঘোরাফেরা না করাই উত্তম। এ সময় কিছু খাদ্যাভ্যাসও মেনে চলা দরকার। যেমন ত্বকের শুষ্কতা কাটানোর জন্য এ সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত হতে হবে। বিশেষ করে শাকসবজি, ঋতু অনুসারে সহজলভ্য ফলমূল খাওয়া দরকার। অ্যান্টি অক্সিডেন্টমুক্ত খাবার যেমন ভিটামনি এ, বি-৬, সি, ই সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে আগ্রহী হতে হবে। হোটেল, বেকারির খাদ্যদ্রব্য পরিহার করে চলাই ভালো।
খ) মুখে মাখার ক্রিম
এটা নির্ভর করে মূলত ব্রনের তীব্রতা ও ত্বকের সংবেদনশীলতার ওপর। এ জন্য কয়েক ধরনের ক্রিম ব্যবহৃত হয়। যেসব ক্রিমের মধ্যে উপাদান হিসেবে বেনজাইল পার অক্সাইড অথবা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড মিশ্রিত রয়েছে এসব ক্রিম ব্রনের জন্য খুবই উপকারী চিকিৎসা বলে ধারণা করা হয়। এটা প্রতি রাতে একবার মুখে মাখতে হয়। এ ছাড়া ট্রিটিনোয়িন ০.০৫% মিশ্রিত ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে যা প্রধানত বেশি তীব্র ধরনের বড় বড় আকৃতির ব্রনের ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য বলা হয়। এ জাতীয় ক্রিম ব্রনের দাগ দূর করতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। এ ছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ক্রিম রয়েছে। ইরাইথ্রোমাইসিন অথবা ক্লিনডামাইসিন গ্রুপের ক্রিম ব্যবহার করার জন্যও পরামর্শ দেয়া হয়। তবে এককভাবে এসব অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার না করাই ভালো। এ ছাড়া এজিলাইক অ্যাসিডমুক্ত সহনীয় মাত্রার ক্রিম বর্তমানে বিকল্প হিসেবে পরামর্শ দেয়া হয় যা দিনে দুইবার মাখতে হয়। আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিডমুক্ত ক্রিম বর্তমান বিশ্বে যোগ হয়েছে ব্রনের চিকিৎসার জন্য। এটা মূলত ত্বক নরম রাখে ও ব্রনের দাগ দূর করে। বাজারে এটা এখন পন্ডস, ক্লিনিক বা নিউট্রোজেনা নামক ক্রিমের সাথে মিকচার হিসেবে পাওয়া যায় বলে জানা গেছে। বাজারে অক্সিজেল নামক বেনজায়িল পার অক্সাইড গ্রুপের ক্রিম বা জেল পাওয়া যায় এবং রেটিজেল নামক ট্রিটিনোয়িন গ্রুপের ক্রিম বা জেল পাওয়া যায়। এ ছাড়া ‘এরোমাইসিন’ নামক ইরাইথ্রোমাইসিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম পাওয়া যায়।
গ) মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক
সেই ১৯৫১ সাল থেকে ‘টেট্রাসাইক্লিন’ অ্যান্টিবায়োটিক ব্রনের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং চিকিৎসকদের কাছে এটি ছিল বেশ পছন্দের পরামর্শ। কিন্তু এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য এবং ইদানীং আরো কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক বাজারে আসায় এ গ্রুপের ওষুধ এখন আর পরামর্শের তালিকায় সাধারণত আসে না। ডক্সিসাইক্লিন বা ‘মিনোসাইক্লিন’ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক এরপর বাজারে এসেছে। তবে এখন বাজারে প্রচলিত ইরাইথ্রোমাইসিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ব্রনের চিকিৎসায় সেবনের জন্য ব্যাপকভাবে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া ‘এমোক্সাসিলিন’ অথবা ‘সেফালেক্সিন’ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক বিকল্প হিসেবে পরামর্শের কথা বলা হলেও তা শুধুই কেতাবি কথা মাত্র। তবে অ্যান্টিবায়োটিক কখন সেব্য সে ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শমাফিক শুরু করাটা শ্রেয়।
ঘ) হরমোন চিকিৎসা
এটা খুবই অপ্রচলিত চিকিৎসা এবং ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে তা সীমাবদ্ধ। ‘স্পাইরোনোল্যাকটোন’ জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের কথা জানা যায় যা যৌন হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে ব্রনের প্রাদুর্ভাব কমাতে সাহায্য করে।
তো হলোতো! যারা ব্রনের অসহ্য যন্ত্রণায় অস্থির, তাদের আর চিন্তা কী? তবে কথায় বলে- ‘আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী’।
কেন এমন হয়?
আগেই বলেছি কিশোর বেলাটা এমনই একটা ক্রান্তিকাল যে সময়টা হচ্ছে শৈশবকালের শেষ আর যৌবনের উঁকি দেয়ার মাঝের বিশেষ এক সময়। আর এই সময়টাতেই কিশোর-কিশোরীদের দেহাভ্যন্তরে চলে বিশেষ বিশেষ কিছু পরিবর্তন। সবচেয়ে বেশি যে ব্যাপারটা ঘটে তা হলো হরমোনের উদ্দীপনা। তারই একটি লক্ষণ হলো এই ব্রন। মূলত এন্ড্রোজেন, প্রজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন নামক যৌন হরমোনের উদ্দীপনার জন্য এটা হয়। এর ফলে ত্বকের নিচে সিবাসিয়াস নামক গ্রন্থি থেকে সেবাম নামক এক প্রকার সাদা জেলির মতো পদার্থ নিঃসৃত হয়।
এই সেবাম ত্বকের নিচে অবস্থান করে বিধায় ব্রনগুলো উঁচু উঁচু ঢিবির মত দেখায়। তবে যার যত বেশি সেবাম নিঃসৃত হবে তার ততোধিক মাত্রায় ব্রন দেখা দেবে। কারণ হরমোনের উদ্দীপনা ব্যক্তিবিশেষে কমবেশি হতে পারে। এ ছাড়া ত্বকের নিচে এক ধরনের ইনফেকশনের কারণেও সিবাসিয়াস গ্রন্থির উত্তেজনার কারণে ব্রন হতে পারে। কিছু রোগের কারণেও ব্রন দেখা দিতে পারে। যেমন মোটা হয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, শরীরে লিপিডের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি। আবার অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণেও হতে পারে। বংশগত কারণেও কারো কারো আবার ব্রন খুব বেশি মাত্রায় হতে পারে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত কসমেটিকস ব্যবহারে লোমকূপগুলো বন্ধ হয়েও ব্রন হতে পারে। আবার কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াজনিত কারণেও ব্রন হতে দেখা যায়। সে রকম ওষুধগুলো হলো- স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, খিচুনিনাশক ওষুধ, ঘুমের ওষুধ ইত্যাদি। এ ছাড়া চকলেট, ক্যান্ডি, চিপস, বাদাম সফট্ ড্রিংকস, তৈলাক্ত খাবার ইত্যাদি গ্রহণের ফলেও ব্রনের আধিক্য দেখা দিতে পারে।
ব্রনের লক্ষণ কী?
মূলত বয়সটা হচ্ছে বিরাট একটা ফ্যাক্টর। এ বয়সে এটা হবেই। আগেই বলেছি, ত্বকের ওপর উইপোকার ঢিবির মতো উঁচু উঁচু দাগগুলোই ব্রন। কারো আকারে ছোট ছোট, কারো বড়, কারোটা আকারে বড় হতে হতে পেকে ফেটে যায়, কারো একই রকম থাকে। শরীরে ব্রন হওয়ার জায়গাগুলো হচ্ছে মুখমণ্ডল, ঘাড়, বুক ও পিঠের ওপরের অংশে। তবে শরীরের যেকোনা জায়গায় হতে পারে। সাধারণত এই বয়সে ব্রন শুরু হয় নাকের ডগার ওপর হানা দেয়ার মাধ্যমে। প্রথমে লালচে বর্ণের এবং ক্রমশ হলদেটে বর্ণের হয়ে থাকে। এরপর কপালে, চিবুকে, গালে, বাহুর ওপরের অংশে হতে দেখা যায়। ব্রনের ফলে কারো সুন্দর মুখটাতে সাদা দাগ পড়ে যেতে পারে আবার কারোবা মুখের ত্বকের ওপর ছোট ছোট গর্ত হয়ে যেতে পারে। তবে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করলে এই পরিণতি ঠেকানো সম্ভব অথবা মাত্রা কমিয়ে আনা যেতে পারে সেটা পরে বলব। ব্রনের আধিক্যের সাথে কারো কারো আবার জ্বর হতে পারে অথবা হাত-পায়ের গিরায় ব্যথা হতে পারে।
তাহলে পরিত্রাণের উপায়?
হ্যাঁ, জানি এটাই এখন বড় জিজ্ঞাস্য ব্যাপার। তবে চিন্তার কিছু নেই, পরিত্রাণের উপায় আছে বৈকি!
ব্রনের চিকিৎসার প্রথম কথা হলো এটা কৈশোরিক বিড়ম্বনা, এই বয়স পেরিয়ে গেলে অর্থাৎ তারুণ্যের জোয়ারে যখন ভাটার টান আসবে অর্থাৎ সাধারণত ২০ বছর বয়সের পর এসব ঝামেলা এমনিতেই বিদায় নেয়। বলাবাহুল্য যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্রন স্বল্পমাত্রায় দেখা যায় এবং তা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে মাত্র শতকরা ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে কমবেশি চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।
ব্রনের চিকিৎসা কয়েকটি উপায়ে করা যায়। ব্যক্তিবিশেষে ও মাত্রানুসারে যার জন্য যেটা প্রযোজ্য তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা যেতে পারে। কিছু অভ্যাস মেনে চলা, মুখে মাখার জন্য ক্রিম, মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ অথবা ক্ষেত্রবিশেষে ব্রনের ওপর ছোট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ব্রনের চিকিৎসা হয়ে থাকে।
ক) অভ্যাসসমূহ : প্রথম ও পূর্বশর্তই হলো সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। বিশেষ করে মুখমণ্ডল ধৌতকরণ প্রণালীটা ভালোভাবে জানতে হবে ও অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মুখের ত্বককে বেশি তৈলাক্ত বা বেশি শুষ্ক হতে দেয়া যাবে না। সে জন্য দিনে অন্তত দুইবার নন-মেডিকেটেড নরম সাবান দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করার সময় হাতের আঙুলের মাথা দিয়ে বৃত্তকারভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সাবান দ্বারা মুখ পরিষ্কার করতে হবে আলতোভাবে। মুখে বেশি ঘষাঘষি করা যাবে না। আবার মুখের ব্রণ যখন তখন নখ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তোলার চেষ্টা না করাই ভালো, তাতে মুখের ওপর দাগ পড়তে পারে। এ সময়ে পারতপক্ষে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো কসমেটিকস ব্যবহার না করাই ভালো। যাদের তৈলাক্ত চুল আছে তাদের চুলটাও পরিষ্কার রাখতে হবে। খুশকিমুক্ত রাখতে হবে। এসময় চুলে তেল, হেয়ার জেল ব্যবহার নিষিদ্ধ। এ ছাড়া বাইরে থেকে বা খেলাধুলা শেষে ঘরে এসে দ্রুত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া উচিত। ঘর্মাক্ত জামাকাপড় তাড়াতাড়ি খুলে শুকাতে দেয়া উচিত। তা ছাড়া প্রচণ্ড রোদের মধ্যে ঘোরাফেরা না করাই উত্তম। এ সময় কিছু খাদ্যাভ্যাসও মেনে চলা দরকার। যেমন ত্বকের শুষ্কতা কাটানোর জন্য এ সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত হতে হবে। বিশেষ করে শাকসবজি, ঋতু অনুসারে সহজলভ্য ফলমূল খাওয়া দরকার। অ্যান্টি অক্সিডেন্টমুক্ত খাবার যেমন ভিটামনি এ, বি-৬, সি, ই সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে আগ্রহী হতে হবে। হোটেল, বেকারির খাদ্যদ্রব্য পরিহার করে চলাই ভালো।
খ) মুখে মাখার ক্রিম
এটা নির্ভর করে মূলত ব্রনের তীব্রতা ও ত্বকের সংবেদনশীলতার ওপর। এ জন্য কয়েক ধরনের ক্রিম ব্যবহৃত হয়। যেসব ক্রিমের মধ্যে উপাদান হিসেবে বেনজাইল পার অক্সাইড অথবা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড মিশ্রিত রয়েছে এসব ক্রিম ব্রনের জন্য খুবই উপকারী চিকিৎসা বলে ধারণা করা হয়। এটা প্রতি রাতে একবার মুখে মাখতে হয়। এ ছাড়া ট্রিটিনোয়িন ০.০৫% মিশ্রিত ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে যা প্রধানত বেশি তীব্র ধরনের বড় বড় আকৃতির ব্রনের ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য বলা হয়। এ জাতীয় ক্রিম ব্রনের দাগ দূর করতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। এ ছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ক্রিম রয়েছে। ইরাইথ্রোমাইসিন অথবা ক্লিনডামাইসিন গ্রুপের ক্রিম ব্যবহার করার জন্যও পরামর্শ দেয়া হয়। তবে এককভাবে এসব অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার না করাই ভালো। এ ছাড়া এজিলাইক অ্যাসিডমুক্ত সহনীয় মাত্রার ক্রিম বর্তমানে বিকল্প হিসেবে পরামর্শ দেয়া হয় যা দিনে দুইবার মাখতে হয়। আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিডমুক্ত ক্রিম বর্তমান বিশ্বে যোগ হয়েছে ব্রনের চিকিৎসার জন্য। এটা মূলত ত্বক নরম রাখে ও ব্রনের দাগ দূর করে। বাজারে এটা এখন পন্ডস, ক্লিনিক বা নিউট্রোজেনা নামক ক্রিমের সাথে মিকচার হিসেবে পাওয়া যায় বলে জানা গেছে। বাজারে অক্সিজেল নামক বেনজায়িল পার অক্সাইড গ্রুপের ক্রিম বা জেল পাওয়া যায় এবং রেটিজেল নামক ট্রিটিনোয়িন গ্রুপের ক্রিম বা জেল পাওয়া যায়। এ ছাড়া ‘এরোমাইসিন’ নামক ইরাইথ্রোমাইসিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম পাওয়া যায়।
গ) মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক
সেই ১৯৫১ সাল থেকে ‘টেট্রাসাইক্লিন’ অ্যান্টিবায়োটিক ব্রনের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং চিকিৎসকদের কাছে এটি ছিল বেশ পছন্দের পরামর্শ। কিন্তু এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য এবং ইদানীং আরো কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক বাজারে আসায় এ গ্রুপের ওষুধ এখন আর পরামর্শের তালিকায় সাধারণত আসে না। ডক্সিসাইক্লিন বা ‘মিনোসাইক্লিন’ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক এরপর বাজারে এসেছে। তবে এখন বাজারে প্রচলিত ইরাইথ্রোমাইসিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ব্রনের চিকিৎসায় সেবনের জন্য ব্যাপকভাবে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া ‘এমোক্সাসিলিন’ অথবা ‘সেফালেক্সিন’ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক বিকল্প হিসেবে পরামর্শের কথা বলা হলেও তা শুধুই কেতাবি কথা মাত্র। তবে অ্যান্টিবায়োটিক কখন সেব্য সে ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শমাফিক শুরু করাটা শ্রেয়।
ঘ) হরমোন চিকিৎসা
এটা খুবই অপ্রচলিত চিকিৎসা এবং ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে তা সীমাবদ্ধ। ‘স্পাইরোনোল্যাকটোন’ জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের কথা জানা যায় যা যৌন হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে ব্রনের প্রাদুর্ভাব কমাতে সাহায্য করে।
তো হলোতো! যারা ব্রনের অসহ্য যন্ত্রণায় অস্থির, তাদের আর চিন্তা কী? তবে কথায় বলে- ‘আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী’।
ব্রন এক কৈশোরিক বিড়ম্বনা
রিভিউ করছেন Unknown
তে
8:29 AM
রেটিং:
No comments: