শিশু-কিশোরদের বাতজ্বর ও বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ
চিকিৎসাবিজ্ঞানের
আধুনিকতায় যদিও আজকাল বাতজ্বর বা রিউমেটিক ফিভারের কথা কম শোনা যায়, তবুও
বাতজ্বর নিয়ে বাবা-মাদের চিন্তার অবকাশ থাকে বৈকি। এই যেমন আট বছরের
আশফিয়ার কথাই ধরা যাক। ওর ইদানীং সন্ধ্যার পর মাঝে মাঝে হাত-পা ব্যথার কথা
বলে, জ্বরও আসে কখনো কখনো আর সাথে টনসিলের প্রদাহ। যদিও ওপরের ছবিটি
বাতজ্বরের অনেক লক্ষণের সাথে মিলে যায় তবে বাতজ্বর নির্ণয় করতে
শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা বাতজ্বর এখনো তৃতীয় বিশ্বের
শিশু-কিশোরদের অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা। যথাসময়ে রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা
করলে হৃৎপিণ্ডের বাল্বের সমস্যা হতে পারে। যার প্রাথমিক সূত্রপাত হল
স্ট্রেপটোকক্কাস শ্বাসজনিত গলদাহের প্রদাহ। বাল্বের সমস্যা হলে পরিবর্তন
করতে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয় আর প্রতিরোধ করতে খরচ হবে বছরে মাত্র
৫০০ টাকা।
এবার আসা যাক রোগের কথায়
১৮০৫ সালে ডা: হেরগার্থ প্রথম রিউমেটিক ফিভার শব্দটি ব্যবহার করেন এবং ১৮১২ সালে ডা: ওয়েলস বাতজ্বরে হৃৎপিণ্ড আক্রান্ত হওয়ার কথা প্রকাশ এবং ১৯৩৭ সালে বাতজ্বরে হৃৎপিণ্ডের বাল্ব আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা যায়।
বাতজ্বরের লক্ষণ ও রোগ নির্ণয়
স্ট্রেপটোকক্কাস জনিত গলদাহের দু-তিন সপ্তাহ পর সাধারণত বাতজ্বর হয়ে থাকে। গলদাহের লক্ষণ : # মুখের ভেতর দিক অস্বাভাবিকভাবে গাঢ় লাল রঙের হয়। # চোয়ালের নিচ দিকে চাপ দিলে ব্যথা হয়। # জ্বর ও মাথাব্যথা থাকে তবে কাশি তেমন হয় না। ষ অন্যান্য রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ থেকে ৫-১৫ বছরের শিশু-কিশোরদের আলাদা করতে ডা: জোনস একটি নিয়মাবলি তৈরি করেছেন, যা জোনসের নিয়মাবলি (The Jones criteria) বলে পরিচিত।
জোনসের নিয়মবালিতে তিনটি অংশ রয়েছে।
প্রধান লক্ষণ বা উপসর্গ : # হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ হয় বুক ধড়ফড় করে। # গিটে ব্যথা ও গিট ফুলে লাল হয়ে যায় (গিট ফোলা ও ব্যথা একই সময়ে সব গিটে হয় না, একটা সারে আরেকটা হয়) # এক ধরনের ফুসকুরি বা র্যাস (Rash) দেখা দেয়, যাকে এরিথেমা মারজিনেটাম (Erythema marginatun) # এক ধরনের স্নায়ুতন্ত্রের খিঁচুনি যা কোরিয়া (Chorea) নামে পরিচিত। ষ চামড়ার নিচে গুটলি থাকতে পারে (Sub-cutaneous nodules)
গৌণ বা অপ্রধান লক্ষণ :
# আগে বাতজ্বরজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস। # শুধু গিঁটে ব্যথা।
# জ্বর। # রক্তের ইএসআর (ESR) বেড়ে যাওয়া ও সিআরপি (CRP) বেড়ে যাওয়া।
- ইসিজিতে (ECG) সমস্যা অর্থাৎ পিআরের (P-R) দূরত্ব বেড়ে যাওয়া।
সমর্থনকারী উপসর্গ অর্থাৎ স্ট্রেপটোকক্কাস জীবাণু দ্বারা গলবিল মুখগহ্বর আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ।
- এএসও (ASO) ইটার বোরক।
- গলার লালা বা থ্রোট সোয়াব কালচারের (Throat Swab cls) এ জীবাণু স্ট্রেপটোকক্কাস জীবাণু পাওয়া।
- স্ট্রেপটোকক্কাস অ্যানটিজেন।
মুখ্য বা প্রধান উপসর্গের একটি এবং গৌণ উপসর্গের দু’টি কিংবা দু’টি মুখ্য উপসর্গের সাথে যদি স্ট্রেপটোকক্কাস জীবাণু সংক্রমণের প্রমাণ থাকে তাহলে বাতজ্বর বা রিউমেটিক ফিভার রোগ হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
চিকিৎসা : পূর্ণ বিশ্রাম হলো প্রথম চিকিৎসা, যা দুই সপ্তাহ থেকে তিন মাস পর্যন্ত, সাথে দেয়া হয় অ্যান্টিবায়োটিক। এর সাথে প্রয়োজন অনুসারে বাতজ্বরে আক্রান্ত শিশু-কিশোরকে জ্বর, গিঁটে ব্যথা ও হৃৎপিণ্ডের ব্যথার চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর আক্রান্ত রোগীর বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ যাতে না হয় তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা দেয়া হয়। আর দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় প্যানিসিলিন (Penicillin) মুখে খেতে দেয়া হয় অথবা মাসিক ভিত্তিকে পেনিসিলিন ইনজেকশন দেয়া হয়। বাতজ্বর আক্রান্ত হওয়ার সময় যাদের হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ হয়নি তাদের ১৮ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা দেয়া হয় এবং যাদের হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ হয়েছিল তাদের ২৫ বছর পর্যন্ত চিকিৎসা দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে কোনো অবস্থাতেই প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা পাঁচ বছরের কম দেয়া যাবে না। আর যাদের হৃৎপিণ্ডের ভাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে তাদের সারা জীবন অন্তত ৪৫ বছর পর্যন্ত চিকিৎসা দিতে হবে। এর সাথে অন্যান্য জটিলতা থাকে তার চিকিৎসা সে অনুযায়ী করা হয়।
প্রতিরোধ : বাতজ্বর অবশ্যই একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ, স্যাঁতসেঁতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ স্বল্পপরিসরে বেশি লোকের বাস ও অপুষ্টি বারবার বাতজ্বরে আক্রান্ত হতে সহায়তা করে। তাই বাতজ্বর যাতে না হয় তার জন্য অবহেলা না করে গলদাহ বা ফেরিনজাইটিসের দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার লোকের মধ্যে ৭.৫ জনের বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ রোগের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা সম্বন্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার, বিভিন্ন গণমাধ্যম (সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন) বাবা-মা ও স্কুলশিক্ষকদের এ রোগের প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
এবার আসা যাক রোগের কথায়
১৮০৫ সালে ডা: হেরগার্থ প্রথম রিউমেটিক ফিভার শব্দটি ব্যবহার করেন এবং ১৮১২ সালে ডা: ওয়েলস বাতজ্বরে হৃৎপিণ্ড আক্রান্ত হওয়ার কথা প্রকাশ এবং ১৯৩৭ সালে বাতজ্বরে হৃৎপিণ্ডের বাল্ব আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা যায়।
বাতজ্বরের লক্ষণ ও রোগ নির্ণয়
স্ট্রেপটোকক্কাস জনিত গলদাহের দু-তিন সপ্তাহ পর সাধারণত বাতজ্বর হয়ে থাকে। গলদাহের লক্ষণ : # মুখের ভেতর দিক অস্বাভাবিকভাবে গাঢ় লাল রঙের হয়। # চোয়ালের নিচ দিকে চাপ দিলে ব্যথা হয়। # জ্বর ও মাথাব্যথা থাকে তবে কাশি তেমন হয় না। ষ অন্যান্য রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ থেকে ৫-১৫ বছরের শিশু-কিশোরদের আলাদা করতে ডা: জোনস একটি নিয়মাবলি তৈরি করেছেন, যা জোনসের নিয়মাবলি (The Jones criteria) বলে পরিচিত।
জোনসের নিয়মবালিতে তিনটি অংশ রয়েছে।
প্রধান লক্ষণ বা উপসর্গ : # হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ হয় বুক ধড়ফড় করে। # গিটে ব্যথা ও গিট ফুলে লাল হয়ে যায় (গিট ফোলা ও ব্যথা একই সময়ে সব গিটে হয় না, একটা সারে আরেকটা হয়) # এক ধরনের ফুসকুরি বা র্যাস (Rash) দেখা দেয়, যাকে এরিথেমা মারজিনেটাম (Erythema marginatun) # এক ধরনের স্নায়ুতন্ত্রের খিঁচুনি যা কোরিয়া (Chorea) নামে পরিচিত। ষ চামড়ার নিচে গুটলি থাকতে পারে (Sub-cutaneous nodules)
গৌণ বা অপ্রধান লক্ষণ :
# আগে বাতজ্বরজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস। # শুধু গিঁটে ব্যথা।
# জ্বর। # রক্তের ইএসআর (ESR) বেড়ে যাওয়া ও সিআরপি (CRP) বেড়ে যাওয়া।
- ইসিজিতে (ECG) সমস্যা অর্থাৎ পিআরের (P-R) দূরত্ব বেড়ে যাওয়া।
সমর্থনকারী উপসর্গ অর্থাৎ স্ট্রেপটোকক্কাস জীবাণু দ্বারা গলবিল মুখগহ্বর আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ।
- এএসও (ASO) ইটার বোরক।
- গলার লালা বা থ্রোট সোয়াব কালচারের (Throat Swab cls) এ জীবাণু স্ট্রেপটোকক্কাস জীবাণু পাওয়া।
- স্ট্রেপটোকক্কাস অ্যানটিজেন।
মুখ্য বা প্রধান উপসর্গের একটি এবং গৌণ উপসর্গের দু’টি কিংবা দু’টি মুখ্য উপসর্গের সাথে যদি স্ট্রেপটোকক্কাস জীবাণু সংক্রমণের প্রমাণ থাকে তাহলে বাতজ্বর বা রিউমেটিক ফিভার রোগ হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
চিকিৎসা : পূর্ণ বিশ্রাম হলো প্রথম চিকিৎসা, যা দুই সপ্তাহ থেকে তিন মাস পর্যন্ত, সাথে দেয়া হয় অ্যান্টিবায়োটিক। এর সাথে প্রয়োজন অনুসারে বাতজ্বরে আক্রান্ত শিশু-কিশোরকে জ্বর, গিঁটে ব্যথা ও হৃৎপিণ্ডের ব্যথার চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর আক্রান্ত রোগীর বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ যাতে না হয় তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা দেয়া হয়। আর দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় প্যানিসিলিন (Penicillin) মুখে খেতে দেয়া হয় অথবা মাসিক ভিত্তিকে পেনিসিলিন ইনজেকশন দেয়া হয়। বাতজ্বর আক্রান্ত হওয়ার সময় যাদের হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ হয়নি তাদের ১৮ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা দেয়া হয় এবং যাদের হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ হয়েছিল তাদের ২৫ বছর পর্যন্ত চিকিৎসা দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে কোনো অবস্থাতেই প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা পাঁচ বছরের কম দেয়া যাবে না। আর যাদের হৃৎপিণ্ডের ভাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে তাদের সারা জীবন অন্তত ৪৫ বছর পর্যন্ত চিকিৎসা দিতে হবে। এর সাথে অন্যান্য জটিলতা থাকে তার চিকিৎসা সে অনুযায়ী করা হয়।
প্রতিরোধ : বাতজ্বর অবশ্যই একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ, স্যাঁতসেঁতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ স্বল্পপরিসরে বেশি লোকের বাস ও অপুষ্টি বারবার বাতজ্বরে আক্রান্ত হতে সহায়তা করে। তাই বাতজ্বর যাতে না হয় তার জন্য অবহেলা না করে গলদাহ বা ফেরিনজাইটিসের দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার লোকের মধ্যে ৭.৫ জনের বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ রোগের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা সম্বন্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার, বিভিন্ন গণমাধ্যম (সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন) বাবা-মা ও স্কুলশিক্ষকদের এ রোগের প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
শিশু-কিশোরদের বাতজ্বর ও বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ
রিভিউ করছেন Unknown
তে
8:19 AM
রেটিং:
No comments: