শিশুদের মস্তিষ্কে আঘাত কী করবেন
চার
বছরের আকাশ দুষ্টুর শিরোমণি। লাফঝাঁপ দৌড় আছেই। হঠাৎ সিঁড়ি থেকে পড়ে যায়,
মাথায় আঘাতের ফলে বমি ও আঘাতপ্রাপ্ত স্থান ফুলে যায়। মা-বাবা অস্থির হয়ে
নিয়ে আসেন নিবেদিতা শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। আকাশের মাথায় আঘাতজনিত
কারণে বমি হয়েছে। এমনিতে সব কিছু নরমাল। আর এটাই হচ্ছে (Head injury) হেড
ইনজুরি।
কারণ : দুর্ঘটনাজনিত কারণে সাধারণত হেড ইনজুরি বা মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত হয় শিশুরা। এ ছাড়া শিশু নির্যাতনের কারণেও আঘাত পেতে পারে। হেড ইনজুরি বা মস্তিষ্কে আঘাতকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।
১. মাথার ওপরের অংশÑ স্কালপে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে।
কারণ : দুর্ঘটনাজনিত কারণে সাধারণত হেড ইনজুরি বা মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত হয় শিশুরা। এ ছাড়া শিশু নির্যাতনের কারণেও আঘাত পেতে পারে। হেড ইনজুরি বা মস্তিষ্কে আঘাতকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।
১. মাথার ওপরের অংশÑ স্কালপে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে।
২. মাথার খুলি বা হাড়-স্কাল, ভল্ট ও বেসে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ভেঙে যেতে পারে।
৩. ব্রেন ড্যামেজ হয়ে
ক. কনকাশন
খ. কনটিউশন ও ল্যামারেশন
গ. কমপ্রেশন হতে পারে।
জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে যদি অজ্ঞান হয়ে যায় :
ক. জরুরিভাবে মাথা পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোনো আঘাত বা ভেঙে গেছে কি না। গলা শক্ত হয়ে আছে কি না। গলার হাড় ভেঙে যেতে পারে, বিশেষ করে সারভিক্যাল স্পাইন। তাই শিশুর অজ্ঞানের গভীরতা দেখতে হবে এবং চোখে পিউপিলের রিফ্লেক্স বা আলোর প্রভাবে চোখের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি না। নাক, কান, চোখ ও মুখের ভেতরে ভালোভাবে দেখতে হবে কোনো রক্তক্ষরণ হয়েছে কি না অথবা সিএসএফ বা ব্রেনের তরল পদার্থ বের হচ্ছে কি না। রিফ্লেক্স ও মাসলের টোন বা কার্যকারিতা দেখতে হবে। নাড়ির গতি, শরীরের ঊষ্ণতা, শ্বাস-প্রশ্বাস ও রক্তের চাপ পরীক্ষা করতে হবে। মাথার এক্স-রে করতে হবে এবং রক্তের গ্রুপ জানা না থাকলে করতে হবে। যদি কোনো শিশু দুই মিনিট বা তার বেশি অজ্ঞান থাকে তাহলে জরুরি ভিত্তিতে তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
খ. প্রাথমিক চিকিৎসা :
শ্বাস-প্রশ্বাস যেন ঠিকমতো হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। মুখে রক্ত বা কফ থাকলে সাকশন বা পরিষ্কার করতে হবে। মাথা এক দিকে কাত করে রাখতে হবে। যদি অজ্ঞানের গভীরতা বেশি হয় এবং কাশি দিতে না পারে তাহলে জরুরি ভিত্তিতে ট্রাকিয়স্টোমি করতে হবে।
অস্থিরতা বা ছটফট করলেÑ ফেনোবারবিটোন বা প্যারালডিহাইড দিতে হবে। অনেক সময় তলপেট প্রস্রাব হয়ে থাকার কারণে ফুলে যায় এবং অস্থিরতা বাড়ায় তাই ক্যাথেটারাইজেশন বা মূত্রথলিতে নল দিতে হবে। মরফিন দেয়া যাবে না।
ষ খাবারের ব্যবস্থা করা : যদি রোগী ১২ ঘণ্টার বেশি অজ্ঞান অবস্থায় থাকে তাহলে নাকে নল দিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ষ চর্মের পরিচর্যা নিতে হবে এবং হাত পা, শরীর নাড়াতে হবে যেন কেউ সোর বা ফোসকা না পড়ে ও হাত-পা শক্ত হয়ে না যায়।
ষ প্রস্রাব ও পায়খানা যেন ঠিকমতো হয় সেভাবে পরিচর্যা নিতে হবে। সংক্রমণ এড়াতে একটি অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হবে।
কী কী দেখতে হবে : মাথায় আঘাতের কারণে ব্রেনে রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং হাড় ভেঙে ভেতরে প্রেসার বা চাপ দিতে পারে, তাই দেখতে হবে :
ষ অজ্ঞানের গভীরতা।
ষ চোখের মণি বা পিউপিলের আকার ও গঠন এবং আলোর প্রতি প্রতিক্রিয়া।
ষ নাড়ির গতি, শরীরের তাপমাত্রা, রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে।
ষ শরীরের কোনো অঙ্গ অবশ হয়েছে কি না পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
কী কী পরীক্ষা করতে হবে :
যদি অজ্ঞান অবস্থায় থাকে এবং খারাপের দিকে যায় বুঝতে হবে ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং ব্রেন ফুলে গেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাথার এক্স-রে এবং সিটিস্ক্যান করা উচিত। এ ধরনের রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব নিউরো সার্জনের কাছে বা হাসপাতালে যেখানে নিউরো সার্জারি বিভাগ আছে এবং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট আছে সেখানে পাঠানো উচিত সুচিকিৎসার জন্য।
সুতরাং মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে বমি, অজ্ঞান হয়ে পড়া, নাক, চোখ, মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হলে বিলম্ব না করে আপনার আদরের সোনামণিকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে অথবা নিকটবর্তী ক্লিনিক বা হাসপাতালে নিয়ে আসবেন। অবহেলার কারণে যেন তার কোনো ক্ষতি না হয়। প্রয়োজনে হাসপাতালে একদিন অবজারভেশনে রাখবেন। হেড ইনজুরির কারণে আপনার সন্তানটির যেন কোনো অমঙ্গল না হয়।
শিশুদের মস্তিষ্কে আঘাত কী করবেন
রিভিউ করছেন Unknown
তে
8:17 AM
রেটিং:
No comments: