পিসি স্লো হয়ে গেছে? | ঠিক কোন আপগ্রেড পিসি পারফর্মেন্স সর্ব উত্তম করতে পারে?
আপনার পিসি স্লো কাজ করছে? হতে পারে এই অবস্থায় আপনি বিভিন্ন অপটিমাইজ
সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন—কিংবা সকল সাধারন সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছেন,
কিন্তু তারপরেও কি কোন কাজ হচ্ছে না? তাহলে বন্ধু এই অবস্থায় প্রয়োজন আপনার
পিসির কিছু হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করার। কিন্তু ঠিক কোন হার্ডওয়্যার আপগ্রেড
করবেন? কীভাবে এবং কোথা থেকে শুরু করবেন? কোন আপগ্রেড করার মাধ্যমে আপনি
কাঙ্ক্ষিত পারফর্মেন্স ফিরে পেতে পারবেন? আর কোনটির পেছনে দৌড়ীরে শুধু
আপনার সময় নষ্ট হবে? এতো প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করবার কিছু নেই বন্ধুরা! কারন
আমি তো আছি তাই না! তো চলুন জেনে নেওয়া যাক, ঠিক কোন আপগ্রেড করার মাধ্যমে
আপনার পিসির সর্বাধিক পারফর্মেন্স ফিরে পেতে পারেন।
আপনার পিসির মেমোরি সাইজ আপগ্রেড করে সহজেই পিসির পারফর্মেন্স বাড়াতে পারেন। র্যাম বাড়ানো একটি সাশ্রয়ী মূল্যের আপগ্রেশান—তাছাড়া প্রায় সকল মেশিনের র্যাম বাড়ানো সম্ভব (কিছু ল্যাপটপেও র্যাম বাড়ানো সম্ভব)। আর সবচাইতে সুবিধার কথা হলো এই আপগ্রেডটি করতে তেমন কোন টেকনিক্যাল জ্ঞানের একদমই প্রয়োজন নেই। যদি আপনি কখনোই আপনার পিসি কেসিং খুলে না থাকেন, তবে সময় চলে এসেছে বন্ধু কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং করে ফেলার!
সত্যি কথা বলতে, র্যাম আপগ্রেড করার মাধ্যমে প্রায় সকল পিসির পারফর্মেন্স তাত্ক্ষণিক ভাবে উন্নতিকরন করা সম্ভব—বিশেষ করে যদি আপনার পিসি স্লো কাজ করে। বিশেষ করে যে প্রোগ্রাম গুলো সবসময় র্যাম একটু বেশি খেতে ভালোবাসে যেমন- আপনার ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার বা গেমিং করার সময়, তো এই ক্ষেত্রে বেশি র্যাম থাকা মানে বেশি ভালো পারফর্মেন্স। এমনকি সাধারন ব্যবহারের জন্যও, বেশি র্যাম সর্বদা বেশি ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ রান রাখতে সাহায্য করে। আর আপনার পিসিতে যতো বেশি র্যাম থাকবে এর মানে ততো বেশি ব্রাউজার ট্যাব ওপেন রেখে কাজ করতে পারবেন।
তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঠিক কতটা র্যাম আপনার পিসির জন্য প্রয়োজনীয়? এক কোথায় বলতে গেলে বর্তমানে আপনার পিসিতে ৪ জিবি র্যাম থাকতেই হবে। কিন্তু আপনি যদি বড় ধরনের পারফর্মেন্স উন্নতি দেখতে চান, তবে ৮ জিবি র্যাম আপনার জন্য সর্ব উত্তম হবে। আর আপনি যদি ভিডিও এডিটিং, গেমিং ইত্যাদির মতো কোন ভারি কাজ করতে চান তবে ১৬ জিবি র্যাম উত্তম হতে পারে।
আমাদের দ্বিতীয় লিস্টে রেখেছি গ্রাফিক্স কার্ড আপগ্রেড। আপনি যদি একজন গুরুগম্ভীর গেমার হয়ে থাকেন, তবে গ্রাফিক্স কার্ড আপনার সর্বপ্রথম আপগ্রেড হওয়া প্রয়োজনীয়। কিন্তু আপনি যদি গুরুগম্ভীর গেমার না হয়ে থাকেন বা যদি ৩ডি রেন্ডারিং না করেন বা ভিডিও রেন্ডারিং না করেন তবে গ্রাফিক্স কার্ড আপগ্রেড করে তেমন বিশেষ কোন লাভ হবে না আপনার জন্য। পিসি প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা গ্রাফিক্স কার্ডের সাথেই প্রায়ই কার্পণ্যতা করে থাকে, পিসির দাম কমানোর জন্য। তাই ভালো পারফর্মেন্সের জন্য ডিফল্ট জিপিইউ এর উপর নির্ভরশীল না হয়ে ডেডিকেটেড জিপিইউ লাগানো উত্তম। নতুন জিপিইউ কেনার আগে gpu.userbenchmark.com থেকে আপনার বর্তমান জিপিইউ এবং ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডের পারফর্মেন্স তুলনা করে নিতে পারেন।
মূলত দুটি কারণে আপনার হার্ড ড্রাইভ আপগ্রেড করা প্রয়োজনীয়—প্রথমত যদি আপনার আরো বেশি স্পেস প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে তবে এবং দ্বিতীয়ত আরো দ্রুত পারফর্মেন্স পেতে চাইলে। আপনার হার্ড ড্রাইভ থেকে সকল অপ্রয়োজনীয় ফাইল গুলো মুছে ফেলার পরেও যদি আপনি এখনো স্পেসের অভাবে ভুগতে থাকেন, তবে সময় এসেছে বন্ধু নতুন আর বড় ক্যাপাসিটির হার্ড ড্রাইভ লাগানোর। নতুন হার্ড ড্রাইভ শুধু যে বেশি ডাটা সংরক্ষন করতেই সাহায্য করবে তা নয়! বরং এটি ভালো পারফর্মেন্স দিতেও প্রভাব বিস্তার করবে।
আপনার সিস্টেম প্রাইমারী ড্রাইভে (আমরা যা সি-ড্রাইভ নামে বুঝি) অন্তত ১০ জিবি ফাঁকা রাখার চেষ্টা করুন, যাতে অপারেটিং সিস্টেম তা ব্যবহার করতে পারে। আর আপনার যদি যথেষ্ট স্পেস থাকে কিন্তু আপনি যদি পারফর্মেন্স উন্নতি করতে চান তবে হার্ড ড্রাইভ ফিজিক্যাল স্পীড আপগ্রেড করা প্রয়োজনীয়। আপনার পিসিতে যদি বর্তমানে ৫,৪০০ আরপিএম ড্রাইভ লাগানো থাকে তবে তা ৭,২০০ আরপিএম মডেলে আপগ্রেড করুন—এতে আপনার স্লো পিসিতে অসাধারন স্পীড বুস্ট দেখতে পাবেন।
কিন্তু আপনি যদি আরো দ্রুতগামী পারফর্মেন্স দেখতে চান তবে এবার সময় এসেছে হার্ড ড্রাইভ বাদ দিয়ে সলিড স্টেট ড্রাইভে সুইচ করার। সলিড স্টেট ড্রাইভ বা এসএসডি হলো ফ্ল্যাশ নির্ভর মেমোরি যাতে সাধারন হার্ড ড্রাইভের মতো কোন ঘূর্ণায়মান ডিস্ক থাকে না এবং এটি অনেক বেশি ফাস্ট হয়ে থাকে। ৫,৪০০ আরপিএম ড্রাইভ গড়ে ১০০ মেগাবাইটস প্রতি সেকেন্ড স্পীড দিতে পারে এবং ৭,২০০ আরপিএম ড্রাইভ গড়ে ১৫০ মেগাবাইটস প্রতি সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড দিতে পারে। কিন্তু সলিড স্টেট ড্রাইভ দিতে পারে ৫০০ মেগাবাইটস প্রতি সেকেন্ড স্পীড এবং বর্তমানে নতুন এসএসডি গুলো আরো ফাস্ট স্পীড দিতে সক্ষম। সলিড স্টেট ড্রাইভের অসুবিধা হলো এখনো অনেক কম ক্যাপাসিটির ড্রাইভ বাজারে পাওয়া যায় এবং সেগুলোর দাম হার্ড ড্রাইভের তুলনায় অনেক বেশি ।
চূড়ান্তভাবে, বেশির গতি সম্পন্ন ড্রাইভ মানে বেশি গতি সম্পন্ন বুট টাইম। যেকোনো প্রোগ্রাম ওপেন হতে আপনার পিসি অনেক কম সময় গ্রহন করবে। তাছাড়া বড় পরিমানের ডাটা ট্র্যান্সফার, গেম লোড হতে, এবং ভিডিও এডিটিং বা র্যো ইমেজ এডিট করতে স্মুথ পারফর্মেন্স পাওয়া যেতে পারে।
আপনি যদি ড্রাইভ সাইজের সাথে আপস না করতে চান তবে হাইব্রিড ড্রাইভ সম্মিলন আপনাকে একে তো অধিক স্পেস প্রদান করবে এবং দ্বিতীয়ত ফাস্ট স্পীড প্রদান করবে। হাইব্রিড ড্রাইভ মানে আপনার পিসিতে একসাথে সলিড স্টেট ড্রাইভ এবং হার্ড ড্রাইভ লাগিয়ে রাখা। এতে আপনি প্রোগ্রাম ইন্সটল এবং অপারেটিং সিস্টেম রান করানোর জন্য সলিড স্টেট ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারেন, যা অত্যন্ত দ্রুত ডাটা ট্র্যান্সফার করবে এবং অধিক ফাইল হার্ড ড্রাইভে সংরক্ষিত রাখতে পারবেন।
আপনার পিসির প্রসেসর আপগ্রেড করা কিন্তু সবচাইতে মুশকিল টেকনিক্যাল কাজ। এটি সেটআপ করা তো মুশকিলের কাজই সাথে প্রসেসর আপগ্রেড সবচাইতে ব্যয়বহুল আপগ্রেড হতে পারে আপনার সিস্টেমের জন্য। তাছাড়া আপনার বর্তমান সিস্টেমের সাথে নতুন প্রসেসরটি ঠিকঠাক কাজ করবে কিনা, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন চিহ্ন। অবশ্যই আপনাকে নতুন প্রসেসরের সাথে আপনার বর্তমান সিস্টেমের সমর্থনের কথা চিন্তা করতে হবে। সত্যি কথা বলতে, প্রসেসর আপগ্রেড করা কিন্তু সবসময় ভালো পারফর্মেন্স দিতে পারে এমনটা নয়।
cpubenchmark.net থেকে আপনি বিভিন্ন প্রসেসের মধ্যে পারফর্মেন্স তুলনা করতে পারবেন। সাধারণভাবে, সেখানের পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রসেসর পরিবর্তন করার মাধ্যমে পিসিতে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ পারফর্মেন্স উন্নতি দেখতে পাওয়া যায়নি। কিন্তু আরো কিছু পরীক্ষা থেকে জানা গেছে সিপিইউ পারফর্মেন্স নির্ভর করে আপনি আপনার সিস্টেমে কি কি সফটওয়্যার রান করছেন তার উপরে।প্রসেসর আপগ্রেড করা তখনই তাৎপর্যপূর্ণ যখন আপনি আপনার পিসিতে বড় ধরনের আপগ্রেড করতে যাচ্ছেন। মনে করুন আপনি এতদিন শুধু বেসিক ব্যবহারে পিসি ব্যবহার করতেন কিন্তু এখন যদি কোন হাই এন্ড কাজ করার চিন্তা করেন তবেই প্রসেসর আপগ্রেড করা উপযুক্ত হবে। কেনোনা এটি অনেক ব্যায়বহুল হতে পারে এবং সাথে আপনার মাদারবোর্ড এবং র্যাম ও আপগ্রেড করার প্রয়োজন হতে পারে। আপনার বর্তমান মাদারবোর্ড যদি নতুন প্রসেসরের সাথে কাগজে কলমে সামঞ্জস্য ও হয়ে থাকে তারপরেও এটি কাজ করানোর জন্য বাওস আপডেট করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। তাই প্রসেসর আপগ্রেড করার আগে একটু ভেবে দেখে নিন।
আর আপনার যদি সত্যিই প্রসেসর আপগ্রেড করার প্রয়োজন হয়ে থাকে তবে আমার মতে কম দামে একটি সম্পূর্ণ নতুন সিস্টেম বিল্ড করায় বেশি ভালো হবে। আমি আরেকটি টিউন করে আপনাদের বলার চেষ্টা করবো যে কীভাবে কম দামের মধ্যে উপযুক্ত হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে একটি ভালো পিসি বিল্ড করতে পারবেন—আপনাকে অত্যন্ত ভালো পারফর্মেন্স দেবে।
আপডেট সফটওয়্যার ব্যবহার করা কিন্তু সত্যিই খুব ভালো সিদ্ধান্ত—যদিও সবসময় এই উক্তিটি কাজে লাগে না। বেশিরভাগ সফটওয়্যার তাদের ভার্সন ফর্মগুরুত্বপূর্ণ.সামান্য.সংশোধন এই ফরম্যাটে রাখে। যদি কোন সফটওয়্যার ভার্সন হয় ০.০.১ তবে বুঝে নিতে হবে সফটওয়্যারটিতে কিছু বাগ ফিক্স করা হয়েছে। যদি কোন সফটওয়্যার আপডেট ভার্সন হয়ে থাকে ০.১.০ তবে বুঝতে হবে এই ভার্সনে সফটওয়্যারটিতে কিছু পারফর্মেন্স অপটিমাইজেশন করা হয়েছে এবং হতে পারে কিছু নতুন ফিচার যুক্ত করা হয়েছে।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আপডেট সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় হতে পারে। কারন এতে সফটওয়্যারটির সম্পূর্ণ ভার্সন পরিবর্তন হয়ে যায়, আর নতুন ভার্সনের সফটওয়্যার সমসময় আগের চেয়ে আরো বেশি রিসোর্স ব্যবহার করে। আপনার পিসি যদি বর্তমান রিসোর্স বাবহারেই হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে তবে সফটওয়্যার ভার্সন আপডেট করার আগে পিসি আপগ্রেড করার কথা ভাবতে হবে।
অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করার জন্যও একই রুল। আপনাকে যে প্রতিনিয়ত আপডেট দেওয়া হয়ে থাকে তা নিরাপত্তা এবং পিসির পারফর্মেন্স উন্নত করার জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়। কিন্তু একদম নতুন ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করা আপনার জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় নয়। কেনোনা নতুন অপারেটিং সিস্টেমে বেশিরভাগ সময় অনেক বাগ থাকে এবং আপনার পিসি স্লো কাজ করে। আপনার পিসি যদি বর্তমান অপারেটিং সিস্টেমের সাথে ভালো কাজ করে তবে নতুন অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেড করার আগে সকল বিষয় ভেবে নেওয়া উচিৎ। যেমন কি কি নতুন ফিচার পেতে চলেছেন, ইউজাররা কি টিউমেন্ট করছে, আপনার বর্তমান সিস্টেমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, ইত্যাদি।
পিসির মাদারবোর্ড কিন্তু আরেকটি উন্নতম এবং মুশকিলের আপগ্রেড—যেখানে আপনার পিসির সকল যন্ত্রাংশ চিপকে লেগে থাকে। মাদারবোর্ড ঠিক তখন আপগ্রেড করা প্রয়োজন যখন আপনার পিসি অত্যন্ত পুরাতন হয়ে গেছে বা আপনি প্রসেসর আপগ্রেড করার কথা ভাবছেন । তাছাড়া শুধু প্রসেসর আর মাদারবোর্ড আপগ্রেড করেই কিন্তু ফাস্ট পিসি পারফর্মেন্স পাওয়া যায়না। সাথে আরো কিছু আপগ্রেশন করার প্রয়োজন পরে ।আপনি যদি প্রফেশনাল ফটো গ্রাফার হোন এবং ফটোশপ বা লাইট রুম নিয়ে যদি আপনার কাজ করা প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে তবে আপনার একটি ভালো মানের মনিটর কেনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমি আরেকটি টিউনে ভালো মনিটর সম্পর্কে বর্ণনা করার চেষ্টা করবো। আপনি যদি গেমার কিংবা প্রোগ্রামার হয়ে থাকেন তবে অবশ্যয় ডুয়াল মনিটর ব্যবহার করার প্রয়োজন বোধ করবেন। তাছাড়া আপনি যদি আমার মতো ব্লগার হয়ে থাকেন কিংবা অনেক লেখালিখি করেন তবে একটি ভালো মানের কীবোর্ড আপগ্রেড করতে পারেন।
লেখকঃ তাহমিদ বোরহান
মূল লেখাঃ Techtubs.Net
১। র্যাম
আপনার পিসির মেমোরি সাইজ আপগ্রেড করে সহজেই পিসির পারফর্মেন্স বাড়াতে পারেন। র্যাম বাড়ানো একটি সাশ্রয়ী মূল্যের আপগ্রেশান—তাছাড়া প্রায় সকল মেশিনের র্যাম বাড়ানো সম্ভব (কিছু ল্যাপটপেও র্যাম বাড়ানো সম্ভব)। আর সবচাইতে সুবিধার কথা হলো এই আপগ্রেডটি করতে তেমন কোন টেকনিক্যাল জ্ঞানের একদমই প্রয়োজন নেই। যদি আপনি কখনোই আপনার পিসি কেসিং খুলে না থাকেন, তবে সময় চলে এসেছে বন্ধু কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং করে ফেলার!
সত্যি কথা বলতে, র্যাম আপগ্রেড করার মাধ্যমে প্রায় সকল পিসির পারফর্মেন্স তাত্ক্ষণিক ভাবে উন্নতিকরন করা সম্ভব—বিশেষ করে যদি আপনার পিসি স্লো কাজ করে। বিশেষ করে যে প্রোগ্রাম গুলো সবসময় র্যাম একটু বেশি খেতে ভালোবাসে যেমন- আপনার ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার বা গেমিং করার সময়, তো এই ক্ষেত্রে বেশি র্যাম থাকা মানে বেশি ভালো পারফর্মেন্স। এমনকি সাধারন ব্যবহারের জন্যও, বেশি র্যাম সর্বদা বেশি ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ রান রাখতে সাহায্য করে। আর আপনার পিসিতে যতো বেশি র্যাম থাকবে এর মানে ততো বেশি ব্রাউজার ট্যাব ওপেন রেখে কাজ করতে পারবেন।
তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঠিক কতটা র্যাম আপনার পিসির জন্য প্রয়োজনীয়? এক কোথায় বলতে গেলে বর্তমানে আপনার পিসিতে ৪ জিবি র্যাম থাকতেই হবে। কিন্তু আপনি যদি বড় ধরনের পারফর্মেন্স উন্নতি দেখতে চান, তবে ৮ জিবি র্যাম আপনার জন্য সর্ব উত্তম হবে। আর আপনি যদি ভিডিও এডিটিং, গেমিং ইত্যাদির মতো কোন ভারি কাজ করতে চান তবে ১৬ জিবি র্যাম উত্তম হতে পারে।
২। গ্রাফিক্স কার্ড
আমাদের দ্বিতীয় লিস্টে রেখেছি গ্রাফিক্স কার্ড আপগ্রেড। আপনি যদি একজন গুরুগম্ভীর গেমার হয়ে থাকেন, তবে গ্রাফিক্স কার্ড আপনার সর্বপ্রথম আপগ্রেড হওয়া প্রয়োজনীয়। কিন্তু আপনি যদি গুরুগম্ভীর গেমার না হয়ে থাকেন বা যদি ৩ডি রেন্ডারিং না করেন বা ভিডিও রেন্ডারিং না করেন তবে গ্রাফিক্স কার্ড আপগ্রেড করে তেমন বিশেষ কোন লাভ হবে না আপনার জন্য। পিসি প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা গ্রাফিক্স কার্ডের সাথেই প্রায়ই কার্পণ্যতা করে থাকে, পিসির দাম কমানোর জন্য। তাই ভালো পারফর্মেন্সের জন্য ডিফল্ট জিপিইউ এর উপর নির্ভরশীল না হয়ে ডেডিকেটেড জিপিইউ লাগানো উত্তম। নতুন জিপিইউ কেনার আগে gpu.userbenchmark.com থেকে আপনার বর্তমান জিপিইউ এবং ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডের পারফর্মেন্স তুলনা করে নিতে পারেন।
৩। ডাটা ড্রাইভ
মূলত দুটি কারণে আপনার হার্ড ড্রাইভ আপগ্রেড করা প্রয়োজনীয়—প্রথমত যদি আপনার আরো বেশি স্পেস প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে তবে এবং দ্বিতীয়ত আরো দ্রুত পারফর্মেন্স পেতে চাইলে। আপনার হার্ড ড্রাইভ থেকে সকল অপ্রয়োজনীয় ফাইল গুলো মুছে ফেলার পরেও যদি আপনি এখনো স্পেসের অভাবে ভুগতে থাকেন, তবে সময় এসেছে বন্ধু নতুন আর বড় ক্যাপাসিটির হার্ড ড্রাইভ লাগানোর। নতুন হার্ড ড্রাইভ শুধু যে বেশি ডাটা সংরক্ষন করতেই সাহায্য করবে তা নয়! বরং এটি ভালো পারফর্মেন্স দিতেও প্রভাব বিস্তার করবে।
আপনার সিস্টেম প্রাইমারী ড্রাইভে (আমরা যা সি-ড্রাইভ নামে বুঝি) অন্তত ১০ জিবি ফাঁকা রাখার চেষ্টা করুন, যাতে অপারেটিং সিস্টেম তা ব্যবহার করতে পারে। আর আপনার যদি যথেষ্ট স্পেস থাকে কিন্তু আপনি যদি পারফর্মেন্স উন্নতি করতে চান তবে হার্ড ড্রাইভ ফিজিক্যাল স্পীড আপগ্রেড করা প্রয়োজনীয়। আপনার পিসিতে যদি বর্তমানে ৫,৪০০ আরপিএম ড্রাইভ লাগানো থাকে তবে তা ৭,২০০ আরপিএম মডেলে আপগ্রেড করুন—এতে আপনার স্লো পিসিতে অসাধারন স্পীড বুস্ট দেখতে পাবেন।
কিন্তু আপনি যদি আরো দ্রুতগামী পারফর্মেন্স দেখতে চান তবে এবার সময় এসেছে হার্ড ড্রাইভ বাদ দিয়ে সলিড স্টেট ড্রাইভে সুইচ করার। সলিড স্টেট ড্রাইভ বা এসএসডি হলো ফ্ল্যাশ নির্ভর মেমোরি যাতে সাধারন হার্ড ড্রাইভের মতো কোন ঘূর্ণায়মান ডিস্ক থাকে না এবং এটি অনেক বেশি ফাস্ট হয়ে থাকে। ৫,৪০০ আরপিএম ড্রাইভ গড়ে ১০০ মেগাবাইটস প্রতি সেকেন্ড স্পীড দিতে পারে এবং ৭,২০০ আরপিএম ড্রাইভ গড়ে ১৫০ মেগাবাইটস প্রতি সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড দিতে পারে। কিন্তু সলিড স্টেট ড্রাইভ দিতে পারে ৫০০ মেগাবাইটস প্রতি সেকেন্ড স্পীড এবং বর্তমানে নতুন এসএসডি গুলো আরো ফাস্ট স্পীড দিতে সক্ষম। সলিড স্টেট ড্রাইভের অসুবিধা হলো এখনো অনেক কম ক্যাপাসিটির ড্রাইভ বাজারে পাওয়া যায় এবং সেগুলোর দাম হার্ড ড্রাইভের তুলনায় অনেক বেশি ।
চূড়ান্তভাবে, বেশির গতি সম্পন্ন ড্রাইভ মানে বেশি গতি সম্পন্ন বুট টাইম। যেকোনো প্রোগ্রাম ওপেন হতে আপনার পিসি অনেক কম সময় গ্রহন করবে। তাছাড়া বড় পরিমানের ডাটা ট্র্যান্সফার, গেম লোড হতে, এবং ভিডিও এডিটিং বা র্যো ইমেজ এডিট করতে স্মুথ পারফর্মেন্স পাওয়া যেতে পারে।
আপনি যদি ড্রাইভ সাইজের সাথে আপস না করতে চান তবে হাইব্রিড ড্রাইভ সম্মিলন আপনাকে একে তো অধিক স্পেস প্রদান করবে এবং দ্বিতীয়ত ফাস্ট স্পীড প্রদান করবে। হাইব্রিড ড্রাইভ মানে আপনার পিসিতে একসাথে সলিড স্টেট ড্রাইভ এবং হার্ড ড্রাইভ লাগিয়ে রাখা। এতে আপনি প্রোগ্রাম ইন্সটল এবং অপারেটিং সিস্টেম রান করানোর জন্য সলিড স্টেট ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারেন, যা অত্যন্ত দ্রুত ডাটা ট্র্যান্সফার করবে এবং অধিক ফাইল হার্ড ড্রাইভে সংরক্ষিত রাখতে পারবেন।
৪। প্রসেসর
আপনার পিসির প্রসেসর আপগ্রেড করা কিন্তু সবচাইতে মুশকিল টেকনিক্যাল কাজ। এটি সেটআপ করা তো মুশকিলের কাজই সাথে প্রসেসর আপগ্রেড সবচাইতে ব্যয়বহুল আপগ্রেড হতে পারে আপনার সিস্টেমের জন্য। তাছাড়া আপনার বর্তমান সিস্টেমের সাথে নতুন প্রসেসরটি ঠিকঠাক কাজ করবে কিনা, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন চিহ্ন। অবশ্যই আপনাকে নতুন প্রসেসরের সাথে আপনার বর্তমান সিস্টেমের সমর্থনের কথা চিন্তা করতে হবে। সত্যি কথা বলতে, প্রসেসর আপগ্রেড করা কিন্তু সবসময় ভালো পারফর্মেন্স দিতে পারে এমনটা নয়।
cpubenchmark.net থেকে আপনি বিভিন্ন প্রসেসের মধ্যে পারফর্মেন্স তুলনা করতে পারবেন। সাধারণভাবে, সেখানের পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রসেসর পরিবর্তন করার মাধ্যমে পিসিতে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ পারফর্মেন্স উন্নতি দেখতে পাওয়া যায়নি। কিন্তু আরো কিছু পরীক্ষা থেকে জানা গেছে সিপিইউ পারফর্মেন্স নির্ভর করে আপনি আপনার সিস্টেমে কি কি সফটওয়্যার রান করছেন তার উপরে।প্রসেসর আপগ্রেড করা তখনই তাৎপর্যপূর্ণ যখন আপনি আপনার পিসিতে বড় ধরনের আপগ্রেড করতে যাচ্ছেন। মনে করুন আপনি এতদিন শুধু বেসিক ব্যবহারে পিসি ব্যবহার করতেন কিন্তু এখন যদি কোন হাই এন্ড কাজ করার চিন্তা করেন তবেই প্রসেসর আপগ্রেড করা উপযুক্ত হবে। কেনোনা এটি অনেক ব্যায়বহুল হতে পারে এবং সাথে আপনার মাদারবোর্ড এবং র্যাম ও আপগ্রেড করার প্রয়োজন হতে পারে। আপনার বর্তমান মাদারবোর্ড যদি নতুন প্রসেসরের সাথে কাগজে কলমে সামঞ্জস্য ও হয়ে থাকে তারপরেও এটি কাজ করানোর জন্য বাওস আপডেট করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। তাই প্রসেসর আপগ্রেড করার আগে একটু ভেবে দেখে নিন।
আর আপনার যদি সত্যিই প্রসেসর আপগ্রেড করার প্রয়োজন হয়ে থাকে তবে আমার মতে কম দামে একটি সম্পূর্ণ নতুন সিস্টেম বিল্ড করায় বেশি ভালো হবে। আমি আরেকটি টিউন করে আপনাদের বলার চেষ্টা করবো যে কীভাবে কম দামের মধ্যে উপযুক্ত হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে একটি ভালো পিসি বিল্ড করতে পারবেন—আপনাকে অত্যন্ত ভালো পারফর্মেন্স দেবে।
৫। সফটওয়্যার
আপডেট সফটওয়্যার ব্যবহার করা কিন্তু সত্যিই খুব ভালো সিদ্ধান্ত—যদিও সবসময় এই উক্তিটি কাজে লাগে না। বেশিরভাগ সফটওয়্যার তাদের ভার্সন ফর্মগুরুত্বপূর্ণ.সামান্য.সংশোধন এই ফরম্যাটে রাখে। যদি কোন সফটওয়্যার ভার্সন হয় ০.০.১ তবে বুঝে নিতে হবে সফটওয়্যারটিতে কিছু বাগ ফিক্স করা হয়েছে। যদি কোন সফটওয়্যার আপডেট ভার্সন হয়ে থাকে ০.১.০ তবে বুঝতে হবে এই ভার্সনে সফটওয়্যারটিতে কিছু পারফর্মেন্স অপটিমাইজেশন করা হয়েছে এবং হতে পারে কিছু নতুন ফিচার যুক্ত করা হয়েছে।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আপডেট সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় হতে পারে। কারন এতে সফটওয়্যারটির সম্পূর্ণ ভার্সন পরিবর্তন হয়ে যায়, আর নতুন ভার্সনের সফটওয়্যার সমসময় আগের চেয়ে আরো বেশি রিসোর্স ব্যবহার করে। আপনার পিসি যদি বর্তমান রিসোর্স বাবহারেই হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে তবে সফটওয়্যার ভার্সন আপডেট করার আগে পিসি আপগ্রেড করার কথা ভাবতে হবে।
অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করার জন্যও একই রুল। আপনাকে যে প্রতিনিয়ত আপডেট দেওয়া হয়ে থাকে তা নিরাপত্তা এবং পিসির পারফর্মেন্স উন্নত করার জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়। কিন্তু একদম নতুন ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করা আপনার জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় নয়। কেনোনা নতুন অপারেটিং সিস্টেমে বেশিরভাগ সময় অনেক বাগ থাকে এবং আপনার পিসি স্লো কাজ করে। আপনার পিসি যদি বর্তমান অপারেটিং সিস্টেমের সাথে ভালো কাজ করে তবে নতুন অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেড করার আগে সকল বিষয় ভেবে নেওয়া উচিৎ। যেমন কি কি নতুন ফিচার পেতে চলেছেন, ইউজাররা কি টিউমেন্ট করছে, আপনার বর্তমান সিস্টেমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, ইত্যাদি।
৬। পিসি স্লো থেকে ফাস্ট করতে আরো কিছু আপগ্রেশন
পিসির মাদারবোর্ড কিন্তু আরেকটি উন্নতম এবং মুশকিলের আপগ্রেড—যেখানে আপনার পিসির সকল যন্ত্রাংশ চিপকে লেগে থাকে। মাদারবোর্ড ঠিক তখন আপগ্রেড করা প্রয়োজন যখন আপনার পিসি অত্যন্ত পুরাতন হয়ে গেছে বা আপনি প্রসেসর আপগ্রেড করার কথা ভাবছেন । তাছাড়া শুধু প্রসেসর আর মাদারবোর্ড আপগ্রেড করেই কিন্তু ফাস্ট পিসি পারফর্মেন্স পাওয়া যায়না। সাথে আরো কিছু আপগ্রেশন করার প্রয়োজন পরে ।আপনি যদি প্রফেশনাল ফটো গ্রাফার হোন এবং ফটোশপ বা লাইট রুম নিয়ে যদি আপনার কাজ করা প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে তবে আপনার একটি ভালো মানের মনিটর কেনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমি আরেকটি টিউনে ভালো মনিটর সম্পর্কে বর্ণনা করার চেষ্টা করবো। আপনি যদি গেমার কিংবা প্রোগ্রামার হয়ে থাকেন তবে অবশ্যয় ডুয়াল মনিটর ব্যবহার করার প্রয়োজন বোধ করবেন। তাছাড়া আপনি যদি আমার মতো ব্লগার হয়ে থাকেন কিংবা অনেক লেখালিখি করেন তবে একটি ভালো মানের কীবোর্ড আপগ্রেড করতে পারেন।
শেষ কথা
র্যাম, এসএসডি এবং গ্রাফিক্স কার্ড আপগ্রেড করা হলো আসল পিসি আপগ্রেড করা—এতে আপনি তাৎক্ষনিকভাবে পারফর্মেন্স উন্নতি লক্ষ্য করতে পারবেন। তবে সিস্টেম আপগ্রেড করার পরে অলৌকিক কিছু আশা করবেন না। আর সিস্টেম যদি খুব পুরাতন হয়ে থাকে তবে নতুন সিস্টেম বিল্ড করায় বেস্ট চয়েজ হবে।লেখকঃ তাহমিদ বোরহান
মূল লেখাঃ Techtubs.Net
পিসি স্লো হয়ে গেছে? | ঠিক কোন আপগ্রেড পিসি পারফর্মেন্স সর্ব উত্তম করতে পারে?
রিভিউ করছেন Unknown
তে
7:41 PM
রেটিং:
No comments: