Top Ad unit 728 × 90

>
[]

ঋতু পরিবর্তন ও রোগবালাই

সোহেল আজিজ|
rogঋতু পরিবর্তনের এই সময়টাতে দেশজুড়ে সবাই কমবেশি ঠাণ্ডা, জ্বর, কাশিতে ভোগী। বিশেষ করে তোমরা শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা একটু বেশি। কাশি হওয়া মানেই যে গুরুতর অসুস্থ, তা নয়। আবার সচেতন থাকাও জরুরি। সুস্থ-স্বাভাবিক শরীর ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হলে কাশি হতে পারে। দিনে এক থেকে ৩০ বার পর্যন্তও কাশতে পারো কেউ কেউ। চলতে পারে সপ্তাহ দুয়েক। তবে রাতে ঘুমের মাঝে কাশি হলে ধরতে হবে অস্বাভাবিক কাশি। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার।
ভাইরাল কাশি, জ্বর
হঠাৎ এক-দুই সপ্তাহের কাশিকে বলি একিউট কাশি; মূলত ভাইরাল। এগুলো সাধারণ প্রি-স্কুল শিশুদের বেশি হয়। বাতাসে ঠাণ্ডা হাওয়ায় ভাইরাস ঢুকে পড়ে চট করে। গরম পানিতে মধু আর তুলসী পাতা মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠলে যেন ঠাণ্ডা না লাগে। হালকা গরম কাপড় গায়ে পরাতে হবে।

দীর্ঘস্থায়ী কাশি
হাঁপানি বা অ্যাজমায় আক্রান্ত হলে বিশেষ ধরনের শব্দযুক্ত কাশি হতে পারে। এটা থাকবে কয়েক সপ্তাহ। অন্তত মাস খানেক ভোগাবে। খেলাধুলা, ধুলাবালি ও ঠাণ্ডা বাতাস হাঁপানিজনিত কাশিকে উসকে দেয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ইনহেলার ও মুখে খাওয়ার ওষুধ প্রয়োজন হয়।
নাক ও সাইনাসের সমস্যা
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ও সাইনাসের সমস্যা এই সময়ে খুবই ঘন ঘন হয়। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে সারাক্ষণ নাক দিয়ে পানি-সর্দি ঝরবে; সঙ্গে কাশিও। এর জন্য বয়সভেদে সাইনাসের এক্স-রে দরকার হতে পারে। নাকে গরম পানিতে বাষ্প টানলে, একটু ম্যানথোল মিশিয়ে নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
পাকস্থলী ও খাদ্যনালির অসুখ
খাবার খাচ্ছি। যাচ্ছে কোথায়? খাদ্যনালি দিয়ে পাকস্থলীতে। ঠিকঠাক না থাকলে, যে হারে খাদ্যে ভেজাল, পাকস্থলী সইবে কী করে! বুকজ্বালা, এসিডিটি, সংক্রমণ- সবই ভোগায়। তোমার এ ধরনের সমস্যা থেকে হতে পারে গ্যাস্ট্রো-ইসেফেজিয়াল রিফ্লাক্স। ফলে গলার স্বর বসে যায়, কর্কশ হয়ে যায়। উসকে দেয় দীর্ঘমেয়াদি কাশি। ঢেঁকুর তোলা বা খাবার গিলতে অসুবিধার কারণে তোমার কাশির উদ্রেক হতে পারে খুব।
ভাইরাস থেকে জ্বর, সর্দি, কাশি-একসঙ্গে
ভাইরাল সংক্রমণ হলে শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হয়। অ্যালার্জি থেকেও হয়। ঋতু পরিবর্তনের কারণে এমনিতেই বাতাসে ধূলিকণা বেড়ে যায়, বাড়ে ভাইরাসও। শিশু-কিশোর ও সদ্য তরুণদের মধ্যে প্রবণতা বেশি। জ্বর হলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পানি পান, সঙ্গে শুধু প্যারাসিটামল। সর্দির জন্য ঠাণ্ডা পানি, ঠাণ্ডা বাতাস ও ধুলা পরিহার করা জরুরি। কাশির ধরন বুঝে কফ-সিরাপ, গরম পানিতে মধু বা লেবু আর সম্ভব হলে তুলসী পাতার রস খেতে হবে।
জ্বর যদি ১০২ ডিগ্রির বেশি হয়, তাহলে পানিতে কাপড় ভিজিয়ে গা মুছতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন ঘন হলে, বুক দেবে গেলে নিউমোনিয়া হতে পারে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। নিজে নিজেই ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ; বড়দের জন্য, শিশুদের জন্যও। হিতে বিপরীত হতে পারে। কাজেই ঋতু পরিবর্তনকে মাথায় রেখে রোগ প্রতিরোধে সচেতন হওয়াটাই জরুরি।
চোখ ওঠা
এ সময়টাতে চোখ লাল হয়ে যাওয়া রোগ- কনজাংকটিভাইটিস হতে পারে। দুই চোখ লাল দেখাবে, পানি ঝরবে। চোখ উঠলে পরিষ্কার কাপড় অথবা একবার ব্যবহার্য টিসু পেপার দিয়ে চোখ পরিষ্কার করবে। দুই চোখে ক্লোরামফেনিকল ড্রপ দুই ফোঁটা করে দেবে; পাঁচ-ছয়বার দিলেই সেরে যাবে।
হতে পারে জলবসন্তও
এই সময়ে আরেকটি অস্বস্তিকর রোগ হতে পারে। এটিও ভাইরাস। জলবসন্ত। প্রথমে একটু জ্বর-সর্দি। তারপর ধীরে ধীরে গায়ে ছোট ছোট দানা। অস্বস্তিকর। চুলকানি; ঢোক গিলতে অসুবিধা। এই রোগের টিকা আছে। জীবনে একবার হয়ে থাকলে আর হওয়ার আশঙ্কা নেই। গায়ে ব্যথা থাকতে পারে। বসন্ত হলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। জ্বর হওয়ার সময়ই রোগটি ছড়ায়। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল আর সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক খাবে।
কী করবে
নাক ঢেকে ধুলা পরিহার করতে হবে। বাইরে বেরোনোর সময় খেয়াল রাখতে হবে আবহাওয়ার দিকে। সে অনুযায়ী গরম কাপড় নিতে হবে। ঠাণ্ডা শীতেও লাগে, গরমেও লাগে। অতিরিক্ত কাপড়ে ঘেমে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে তোমার। ঠাণ্ডা বাতাস এড়িয়ে চলো। পানি পান করো অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি। খেলাধুলার সময় যাতে ধূলি-বাতাস আর ধোঁয়া আক্রান্ত না করে খেয়াল রাখো। জ্বর যদি তিন দিনের বেশি থাকে, কাশি যদি দুই সপ্তাহের বেশি হয়, সর্দি যদি না-ই সারে, তবে নিজে নিজেই কোনো অ্যান্টিবায়োটিক শুরু না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। তরল-গরম-টাটকা খাবার সব সময়ই ভালো। এ সময়ে একটু বেশি ভালো গরম পানিতে মধু। শ্বাস নিতে হবে বুকভরে, যতটা বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাওয়া যায় ততটাই সুস্থতা।
ঋতু পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন- এসব নিয়েই তো থাকতে হবে। তাই স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়মগুলো মেনে সুস্থ থাকো, ভালোভাবে বেড়ে ওঠো, দেশ ও দশের সেবায় ব্রতী হও।
ঋতু পরিবর্তন ও রোগবালাই রিভিউ করছেন Unknown তে 8:21 AM রেটিং:

No comments:

কপিরাইট ২০১৬ © টিপস ওয়ার্ল্ড এর সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ডিজাইন করেছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন

যোগাযোগ

Name

Email *

Message *

Theme images by enot-poloskun. Powered by Blogger.