প্রেমকালীন সময়ের কিছু ভুল
দুজন
মানুষ হৃদয়ের টানে কাছে আসে, একজন আরেকজনকে ভালোবাসে। তৈরি হয় সুন্দর একটা
সম্পর্ক। ভালোবাসার সম্পর্কই গড়ায় বিয়ের সম্পর্কের দিকে। ফলে পরিণয়ের
পরিণতি হয় সুন্দর একটা সংসার। তবে সব সময়েই কি ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়ে
হয়? হয় না! তাই বলে তো জীবন থেমে থাকে না। মানুষ বিয়ে করে অন্য কাউকে করে
যেতে থাকে সংসার। সেই সংসার যে সুখের হয় না, তাও নয়। সুখের হয় এবং অনেক সময়
এ ভাবনাও মনে উঁকি দিয়ে যায় যে, এ মানুষটিই আমার জন্য “পারফেক্ট”! কিন্তু
প্রেমের সময় করা কিছু ভুল কেড়ে নিতে পারে আপনার সংসারের শান্তি। ছারখার করে
দিতে পারে আপনার সুখের জীবন। এটা যে শুধু প্রেমিক বা প্রেমিকা ছাড়া অন্য
কাউকে বিয়ে করলে হবে তা নয়, ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করলেও হতে পারে!
প্রেম চলাকালীন অবস্থায় আপনার করা কিছু ভুলের মাশুল আপনাকে দিতে হতে পারে
সারাটা জীবন। প্রেমের সময়ে করা কোন ভুলগুলো আপনার বিবাহিত জীবনে ডেকে আনতে
পারে অশান্তি, তা জেনে নিন।
শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো :
পৃথিবীর কোনো ধর্মই বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ককে সমর্থন করে না। সকল
ধর্মেই এ বিষয়ে রয়েছে কড়া নিষেধ। ধর্মীয়মতে, বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক
সম্পূর্ণ অনৈতিক। ছোটবেলা থেকেই যে ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে আমরা বড় হই তাতে
শিখে থাকি যে, ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করা পাপ। এই শিক্ষা আমরা সারা জীবনই বয়ে
চলি। তাই যখন বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক হয়, তা মনের ভেতর সূক্ষ্ম পাপবোধ
প্রবেশ করিয়ে দেয়। ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ের পরও তা মনের ভেতর কাঁটার মতো
বিঁধে থাকে। আর তাছাড়া এটা চরিত্রের ওপর একটা দাগও বটে! ধরুন, বিয়ের পর
ঝগড়া করার সময় রাগের মাথায় আপনার স্বামী বা স্ত্রী যদি এ কথা বলে বসেন যে,
“বিয়ের আগে আমার সাথে তোমার শারীরিক সম্পর্ক ছিল, তাহলে তো অনেকের সাথেই
থাকতে পারে”! এ কথাতে কিন্তু আপনারই অপমান, আপনার দিকেই কিন্তু আঙুল তোলা
হলো! তাই আবেগের তোড়ে ভেসে গিয়ে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কে না জড়ানোই উচিত
হবে। আর যদি ভালোবাসার মানুষটির সাথে বিয়ে না হয়ে অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়,
তাহলে পাপবোধের বোঝা আপনাকে বয়ে বেড়াতে হবে সারাটা জীবন। মনে খচখচ করতে
থাকবে, আপনি প্রতারণা করেছেন আপনার স্বামী বা স্ত্রীর সাথে।
পরিবার বা বন্ধুদের কাছে প্রেমিক/প্রেমিকার দুর্নাম করা :
ভালোবাসার সম্পর্কে টানাপোড়েন হতে পারে। হতে পারে মান-অভিমান, মনোমালিন্য,
ঝগড়াও। যাই হোক না কেন, ভুলেও নিজের প্রেমিক বা প্রেমিকা সম্পর্কে কোনো
কটু কথা আপনার পরিবারের কাউকে বা বন্ধুদের বলবেন না। এমনকি তাঁর কোনো দোষ
বা দুর্বলতার কথাও বলবেন না। কারণ বিয়ের পর আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকার
কানে এসব কথা কোনো না কোনোভাবে পৌঁছবেই! আর তখন তৈরি হবে সংসারে অশান্তি।
এসব কারণে বিয়ের সম্পর্ক ভেঙে পর্যন্ত যেতে পারে! তাই সতর্ক থাকুন। প্রচন্ড
রেগে গেলেও নিজেকে সামলে নিন এবং প্রেমিক বা প্রেমিকার নামে দুর্নাম করা
থেকে বিরত থাকুন।
অগ্রিম অর্থনৈতিক আশ্বাস দেয়া :
এ বিষয়টি মূলত ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আপনার প্রেমিকাকে এমন কোনো
অর্থনৈতিক আশ্বাস দেবেন না, যা আপনার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। অনেক সময়
আবেগের বশে বলে ফেলা কথা বা প্রতিশ্রুতি হয়তো পরবর্তীতে রাখার মতো অবস্থা
থাকে না। ফলে বিয়ের পরে মেয়েদের আশা ভঙ্গ হয় এবং তাঁরা স্বামীদের ওপর থেকে
আস্থা হারিয়ে ফেলে। আবার অনেক মেয়ে দেখা যায় এই অর্থনৈতিক আশ্বাস শুনে লোভে
পড়ে বিয়েতে আগ্রহী হয়ে ওঠে, যা অবশ্যই একজন পুরুষের কাম্য নয়। আপনি হয়তো
আপনার স্ত্রীকে ভালোবেসে অনেক কিছুই দিতে চাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। যেমন
একটা বাড়ি বা গয়নাগাটি অথবা বিলাসী জীবন। কিন্তু সব ধরনের সফলতা অর্জন করা
সব মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই হয়তো আপনার সব চাওয়া আপনি পূরণ করতে নাও
পেরে উঠতে পারেন। এ কথাটি সব সময় মাথায় রাখুন এবং প্রেমিকাকে অর্থনৈতিক
প্রতিশ্রুতি দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
নিজের পারিবারিক ব্যাপারে সত্য গোপন করা :
যে মানুষটিকে আপনি ভালোবাসেন, বিয়ে করতে চান, তাঁর সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে
আপনার পরিবার সম্পর্কে জানার। অনেকেই ভাবেন, প্রেমের সময় সবকিছু জানানোর কী
দরকার? বিয়ের পর তো জানতে পারবেই! কিন্তু এই ভাবনাটি ভুল। আপনার প্রেমিক
বা প্রেমিকাকে আপনার পরিবার সম্পর্কিত সব তথ্য জানান, কোনো কিছুই গোপন
করবেন না। কারণ বিয়ের পর তিনি যদি গোপন কিছু জানতে পারেন, তাহলে তা সংসারে
অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আপনি হয়ে উঠবেন তাঁর অবিশ্বাসের পাত্র। অনেকের
পরিবারেই অনেক সমস্যা থাকতে পারে। যেমন কারো বাড়িতে বিমাতা রয়েছে, কারো
বাবা-মা ডিভোর্সড, কারো ভাই, বোন, মা বা বাবা মানসিকভাবে অসুস্থ ইত্যাদি।
পরিবারে এমন কোনো ব্যাপার থাকলে আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকাকে তা অবশ্যই
জানান। এসব বিষয় গোপন করলে তা আপনার বিবাহপরবর্তী জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াবে।
প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করা :
অনেকের জীবনে একের অধিক প্রেম আসে। আপনার বর্তমান প্রেমের সম্পর্কের আগেও
হয়তো আরেকটি প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ ব্যাপারটি বর্তমান ভালোবাসার মানুষটির
কাছে গোপন না করাই ভালো। অনেকেরই প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেলেও প্রাক্তন
প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে যোগাযোগ থাকে বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে।
বিয়ের আগ পর্যন্ত ব্যাপারটি ঠিক আছে। কিন্তু বিয়ের পর ব্যাপারটি সংসারে
আগুন লাগানোর জন্য যথেষ্ট। স্বামী বা স্ত্রী এ নিয়ে আপনাকে খোটা দিতেই
পারে। এ ব্যাপারটি থেকে ঘটতে পারে দাম্পত্য কলহের সূত্রপাত। তাই নতুন
সম্পর্কে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে যোগাযোগ
বন্ধ করে দিন। আর বিয়ের পরে তা যেন অবশ্যই না থাকে। এতে আপনারই মঙ্গল।
বন্ধুদের অতিরিক্ত সময় দেয়া :
বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে কার না ভালো লাগে! তবে তা অভ্যাস বা
আসক্তির পর্যায়ে যেন না চলে যায়। কারণ প্রেমের সম্পর্কের সময়েও আমরা
বন্ধুদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারি, কিন্তু বিয়ের পর তা আর সম্ভব হয় না।
কিন্তু আপনি যদি এই অভ্যাসটি ধরে রাখতে চান, তাহলে সাংসারিক জীবনে অশান্তি
আসবেই আসবে! কোনো স্বামী বা স্ত্রী চাইবেন না যে আপনি তাঁকে ছাড়া অন্য
কোথাও অঢেল সময় ব্যয় করতে থাকেন। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। তাছাড়া
প্রেমের সময়ে বেশি আড্ডাবাজ প্রকৃতির পুরুষকে অনেক নারীই আদর্শ স্বামী মনে
করেন না, তাই বিয়ে প্ল্যান মাথায় থাকলে আড্ডাবাজ স্বভাবটা আস্তে আস্তে বদলে
ফেলুন।
প্রেমকালীন সময়ের কিছু ভুল
রিভিউ করছেন Unknown
তে
9:17 PM
রেটিং:
No comments: