Top Ad unit 728 × 90

>
[]

ইন্টারনেটের অজনা অধ্যায় : ডীপ ওয়েব বা ডার্ক নেট নিয়ে বিস্তারিত

গুগল সবার কাছে পরিচিত একটি নাম। কোন কিছু জানার দরকার হলে অন্যকে না জিজ্ঞাসা করে প্রায় সবাই সার্চ দেয় গুগলে। কিন্তু প্রশ্ন হল গুগল কতটুকু জানে? আপনি জেনে অবাক হবেন যে গুগল আপানার সামনে যে তথ্য হাজির করতে পারে তা সমগ্র ইন্টারনেট দুনিয়ার তথ্য ভান্ডারের মাত্র ১০ ভাগ। বাকি ৯০ ভাগ গুগলের ক্ষমতার বাইরে। আর সেই ৯০ ভাগ চিরকাল আপনার অজানাই থেকে যাবে যদি আপনি কেবলমাত্র গুগলের উপর নির্ভর করে থাকেন। একটি জরিপে দেখা গেছে দৃশ্যমান ওয়েবে যে পরিমাণ ডাটা সংরক্ষিত আছে তারচেয়ে ৫০০গুণ বেশি পরিমাণ ডাটা সংরক্ষিত আছে অদৃশ্যওয়েবে। এই অদৃশ্য ওয়েবের নাম হল ডীপ ওয়েব। একে ডীপ নেট, দ্যা ইনভিজিবল ওয়েব, ডার্ক নেট, হিডেন ওয়েব, আন্ডার নেট ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।

সার্চ ইঞ্জিনের কাজ হল ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলোর পেইজগুলো ইনডেক্স করে রাখা যাতে পরবর্তীতে সেই পেইজগুলো খুঁজে বের করা সহজ হয়। আর এর জন্য যে প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয় সেটাকে বলে ক্রাউলার। ক্রাউলার ওয়েবসাইটের HTML ট্যাগ দেখে ওয়েবসাইট গুলোকে লিপবদ্ধ করে। আর এই জন্যই গুগল এতো দ্রুত আমাদেরকে রেজাল্ট দিতে পারে। আর ইনডেক্স করে রাখার জন্য সেই ওয়েবসাইটের এডমিনের অনুমতি দরকার হয়। কিন্তু সাইটের এডমিন পেইজ ইনডেক্স করার অনুমতি না দিলে গুগল সেটা খুঁজে বের করতে পারবে না। এটিই ডীপ ওয়েবের মুল ধারণা।


এই ডীপ ওয়েবের একটি অংশে নানাধরনের অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজ করা হয়। আর সেই অংশকে বলা হয় ডার্ক ওয়েব। সেখানে আপনি আপনার সাধারণ ব্রাউজার দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই একধরণের বিশেষ সফটওয়ারের সাহায্য নিতে হবে।

ডার্ক ওয়েবের আরেকটি বিশেষত্ব হল এরা ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েবের সাইটগুলোর মত টপ লেভেল ডোমেইন (যেমন .com) ব্যবহার না করে “Pseudo Top Level Domain” ব্যবহার করে যা কিনা মূল ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েবে না থেকে দ্বিতীয় আরেকটি নেটওর্য়াকের অধীনে থাকে। এ ধরণের ডোমেইনের ভেতর আছে Onion, Bitnet, Freenet প্রভৃতি। এই ডোমেইনগুলোর নামও একটু ভিন্নধরণের, সাধারণ কোন নামের মত না। যেমন: http://hpuuigeld2cz2fd3.onion

ডার্ক ওয়েবে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেটওর্য়াক হল অনিয়ন নেটওর্য়াক। অনিয়নের Pseudo-top-level-domain হল .onion। অনিয়ন ওয়ার্ল্ডে ঢুকতে হলে আপনাকে টর ব্রাউজার ডাউনলোড করতে হবে। টর আপনার পরিচয়কে লুকিয়ে ফেলবে আর এর ফলে কারো পক্ষে আপনার অবস্থান শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। আপনি যখন টর দিয়ে কোন সাইটে ঢুকতে যাবেন তখন টর আপনার এই রিকোয়েস্ট কঠিন এনক্রিপশনের মধ্য দিয়ে অনিয়ন প্রক্সিতে পাঠাবে। অনিয়ন প্রক্সিতে আপনার পাঠানো ডেটা দুর্বোধ্য এক স্ক্রিপ্টে পরিণত হয়। এবার অনিয়ন প্রক্সি এই ডেটা নিয়ে মূল ইন্টারনেটমূখো হবে যেখানে অনেকগুলো অনিয়ন রাউটারগুলো অপেক্ষা করছে। অনিয়ন রাউটারে প্রবেশের আগে অনিয়ন নেটর্য়াকের প্রবেশপথে এই ডেটা আবার এনক্রিপশন হবে। নেটওর্য়াক থেকে বের হওয়ার সময় আরো একবার এনক্রিপশনের ভেতর দিয়ে যায়। এর মাঝেই অনিয়নের বেশ কিছু রাউটারের ভেতর দিয়ে এনক্রিপশন হয় যেখানে এক এক রাউটারে এনক্রিপশন আউটপুট এক এক রকম। সবশেষে ডেটা যখন প্রাপকের হাতে গিয়ে পৌছায় তা তখন ডিএনক্রিপশন প্রসেসের মাধ্যমে আদি অবস্থানে ফিরে আসে।

ডার্ক ওয়েবের মুল লক্ষই হল অপরাধের একটি অভয়ারণ্য গড়ে তোলা। সেখানে এমন কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখানে হেরোইন, মার্জুয়ানা থেকে শুরু করে নানা ধরণের মাদক হোম ডেলিভারী দেওয়া হয়। আরও কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখানে জঙ্গী গ্রুপগুলো তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পালন করে। কিভাবে বোমা বানাতে হয়, নিক্ষেপ করতে হয়, বারুদ বানাতে হয়, বারুদ লোড করতে হয় ইত্যাদি সেখানো হয়ে থাকে সেসব ওয়েবসাইটে। কিছু সাইটে রেডিমেইড অস্ত্রও পাওয়া যায়, রকেট লাঞ্চার, একে ৪৭, মর্টার ইত্যাদি। ডার্ক ওয়েবে এমন অনেক সাইট আছে যেখানে ভারাটে খুনীও পাওয়া যায়। টাকার বিনিময়ে খুন করবে কিন্তু কেও কারো পরিচয় জানবে না। ডার্ক ওয়েবে নানা ধরণের মেইল ও চ্যাট সার্ভিস আছে যেগুলো দিয়ে পরিচয় গোপন করে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এখানে কেনাবেচার জন্য কোন ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ড ব্যাবহার করা হয় না। এখানে ব্যাবহার করা হয় বিটকয়েন। ১বিটকয়েনের মুল্য প্রায় সাড়ে ১০ ইউরো। বিটকয়েনের ব্যাবহার এই ডার্ক ওয়েবকে করেছে আরও নিরাপদ। এর ফলে সহজেই কেও কাওকে ধরতে পারবে না।

ফেইসবুকের মতন কিছু যোগাযোগের ওয়েবসাইটও আছে সেখানে, সেগুলোর মধ্যে একটি হল http://ay5kwknh6znfmcbb.onion/torbook (টরবুক)। ই-মেইল সেবার জন্য রয়েছে http://jhiwjjlqpyawmpjx.onion/squirrelmail (টরমেইল)। সার্চ ইঞ্জিনের জন্য রয়েছে http://hpuuigeld2cz2fd3.onion (ডীপ সার্চ)।

এখন একটি প্রশ্ন আসতে পারে সবার মনে, এতো অনৈতিক কাজ হয় এখানে তবু CIA, FBI এরা কিছুই করে না। এর উত্তর হল ডীপ ওয়েবের নেটওয়ার্ক এতই গভীর যে FBI, CIA এরা কিছুই করতে পারে না। ডীপ ওয়েবে কেও কাওকে চেনে না, কারো পরিচয় কেও জানে না, কেও কারো আইপি ট্রেস করতে পারে না। আর এজন্যই এখানে সবকিছুই নির্ভয়ে চলে। তবে কেও যদি ডীপ ওয়েবের ডেটা এনক্রিপসন এবং ডিএনক্রিপসন দুপ্রান্তে নজরদারি করতে পারে তবে সে নিশ্চিত হতে পারবে ডেটা সেন্ডার বা রিসিভারের লোকেশন কোথায়।

তবে ডীপ ওয়েবের কিছু ভালো দিকও আছে। অনেক ভালো মানুষও এখানে তথ্য আদান প্রদান করে। Wikileaks এর শুরুই হয়েছিল এই ডীপ ওয়েবে। তবে এখানকার প্রায় ৯৯% ই খারাপ।
ইন্টারনেটের অজনা অধ্যায় : ডীপ ওয়েব বা ডার্ক নেট নিয়ে বিস্তারিত রিভিউ করছেন Unknown তে 11:03 PM রেটিং:

No comments:

কপিরাইট ২০১৬ © টিপস ওয়ার্ল্ড এর সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ডিজাইন করেছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন

যোগাযোগ

Name

Email *

Message *

Theme images by enot-poloskun. Powered by Blogger.